বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাটডাউন: জরিমানায় পড়তে পারেন ক্রেডিট কার্ডধারীরা

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২১ ১৬:৩৮

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা শতভাগ পরিপালন করা হয়েছে। কোনো গ্রাহক কিস্তি না দেয়ার কারণে ঋণসীমা অতিক্রম করলেও বাড়তি চার্জ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু সেই সার্কুলারের সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে কোনো নির্দেশনা জারিও করেনি। ফলে এখন আগের নিয়মে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ডের বিল শোধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার ছাড় দিলে আমরা সেটা পরিপালন করব: মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

গত বছর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর আর ৫ এপ্রিল এক সপ্তাহের লকডাউন চলাকালে ক্রেডিট কার্ডধারীদের বিল পরিশোধে ভোগান্তির বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবেচনায় রাখলেও এবার শাটডাউনে সেটি নিয়ে ভাবা হয়নি। সময়মতো বিল পরিশোধ না করা হলে জরিমানা না নেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এবার ব্যাংকের সব শাখাও খোলা থাকবে না। সব ব্যাংকের বুথে টাকা জমা দেয়ার পদ্ধতিও নেই। ফলে এবার সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারলে জরিমানার মুখে পড়তে হতে পারে।

ক্রেডিট কার্ডের বিল জমা দেয়ার কোনো একক তারিখ নেই। একেকজনের ক্ষেত্রে এটি একেক রকম। তবে নির্ধারিত সময়ে বিল দিতে না পারলে সেখানে বিলম্ব ফি ছাড়াও উচ্চ হারে সুদ গুনতে হয়। এ কারণে গ্রাহকরা কার্ডের বিল সময়মতো পরিশোধে জোর দিয়ে থাকেন।

বেসরকারি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন জয়নাল হোসেন। থাকেন মিরপুরে। সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তার বিলিং ডেট।

এর মধ্যে চার দিন টানা ব্যাংক বন্ধ। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে কোন শাখা খোলা, সেটা জানেন না জয়নাল। এখন বিল কীভাবে দেবেন, সেটা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

ক্রেডিট কার্ডের বিল অনলাইনেও জমা দেয়া যায়। তবে সবাই অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহার করেন না। তারা ব্যাংকে গিয়েই টাকা পরিশোধ করেন।

নিউজবাংলাকে জয়নাল বলেন, ‘বছরের প্রথম দিকে লকডাউনে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছিল কেউ বিল না দিলেও জরিমানা বা বাড়তি কোনো চার্জ লাগবে না। কিন্তু এবার কেন সেই সুবিধা দেয়া হয়নি, সেটা বুঝতে পারলাম না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক শাটডাউন নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কিছুই নেই

২০২০ সালের ২৬ মার্চ যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, তখন টানা দুই মাস কেউ বিল দিতে না পারলেও জরিমানা দিতে হয়নি। গত ৫ থেকে ১২ এপ্রিল যখন লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, বিধিনিষেধের মধ্যে কেউ যদি বিল পরিশোধ করতে না পারে, তাহলে তাকে জরিমানা করা যাবে না।

এবার শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধে সরকার অনেক কঠোর। মানুষকে ঘরে রাখতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া বের হওয়ায় বিধিনিষেধের প্রথম দিন দুই শরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

আগের দিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, বিধিনিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবারের পাশাপাশি ব্যাংক বন্ধ থাকবে রোববারও। বাকি দিন সবগুলো শাখা খুলবে না। জেলা শহরে প্রধান শাখা আর একটি জেলায় একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ তিনটি শাখা খোলা থাকবে।

আরও পড়ুন: ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্তে ভোগান্তির শঙ্কা

রাজধানী বা চট্টগ্রামের মতো শহরে কী ব্যবস্থাপনা থাকবে, সেটি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ নেই। কেবল বলা আছে, ব্যাংকের কোন শাখা খোলা থাকবে, সেটি বন্ধ শাখায় টানিয়ে রাখতে হবে।

একাধিক ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকের সব শাখা খোলা নেই। বাইরে চলাফেরায় বিধিনিষেধ থাকায় তারা সঠিক সময়ে বিল জমা দিতে পারছেন না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে যথাসময়ে বিল পরিশোধ না করলে সুদের খড়্গ আছে। কারণ, ব্যাংকগুলো সরল সুদ ও বিলম্ব ফি আরোপ করে।

শাটডাউনে ব্যাংকের সব শাখা খোলা থাকবে না। আবার সব বুথেও টাকা জমা দেয়া যায় না। এটাই কার্ডধারীদের দুশ্চিন্তার কারণ

ক্রেডিট কার্ডের বিল সময়মতো দিতে না পারলে জরিমানার পাশাপাশি অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়। ব্যাংকে সুদহার ৯ শতাংশ হলেও কার্ডের সুদ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আছে।

এ বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন ব্যাংকাররাও। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ না নিলে তাদের নিজে থেকে কিছু করার সুযোগ নেই।

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ড নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা শতভাগ পরিপালন করা হয়েছে। কোনো গ্রাহক কিস্তি না দেয়ার কারণে ঋণসীমা অতিক্রম করলেও বাড়তি চার্জ আরোপ করা হয়নি। কিন্তু সেই সার্কুলারের সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে কোনো নির্দেশনা জারিও করেনি। ফলে এখন আগের নিয়মে গ্রাহককে ক্রেডিট কার্ডের বিল শোধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার ছাড় দিলে আমরা সেটা পরিপালন করব।’

করোনা দুর্যোগে লকডাউন পরিস্থিতিতেও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের এই জরিমানার মুখে ঠেলে দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বক্তব্য জানতে পারেনি নিউজবাংলা। মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামকে ফোন দিলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

বাংলাদেশে গত এক দশকে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। করোনাকালে নগদ অর্থের বদলে কার্ডে ইলেকট্রনিক উপায়ে টাকা পরিশোধের চল আরও বেড়েছে। এখন পাড়া-মহল্লায় বড় মুদির দোকানেও কার্ডে কেনাকাটা করা যায়।

শাটডাউনে প্রশাসন যে কঠোর, সেনা মোতায়েনের মাধ্যমেই সেই বার্তা দেয়া হয়েছে

২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিলেন ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২৯ জন, যা চলতি মার্চে বেড়ে হয়েছে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৪ জন। ফলে এক বছরে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫ জন।

গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ বছর মার্চে সেটা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার সময়ে গ্রাহকদের নতুন নতুন সেবা দেয়া হয়েছে, যাতে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ে। যার সার্বিক প্রভাব কার্ডের ব্যবহার ও লেনদেনে পড়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে গ্রাহক কিস্তি না দিলেও বাড়তি চার্জ আরোপ করা হয়নি। এমন নির্দেশ আবার এলে সেটা পরিপালন করা হবে।’

২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ঋণে সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মানে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদ হওয়ার কথা ১৪ শতাংশ। তবে এই নির্দেশনাও অমান্য করে অনেক ব্যাংকই বিভিন্নভাবে এর চেয়ে বেশি টাকা আদায় করত।

ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারবে না বলে নতুন নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ওই বছর ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।

ক্রেডিট কার্ডে সুদ আরোপ শুরু হবে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়ের পর। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ৪৫ দিন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়।

আর ক্রেডিট কার্ডে ঋণসীমার বিপরীতে ৫০ শতাংশের বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে না।

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা সুদে বিল পরিশোধের সুযোগ থাকে। অর্থাৎ প্রতি ৩০ দিনের খরচের ওপর বিল তৈরি করে ওই বিল পরিশোধের জন্য ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ করলে কোনো সুদ আরোপ করা হয় না। আর এই সময় পার হয়ে গেলে ওই বিলের ওপর সরল হারে সুদ আরোপ করে ব্যাংক। বিল পরিশোধে বিলম্ব হলে এই সুদহার চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর