বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংক নিয়ে সিদ্ধান্তে ভোগান্তির শঙ্কা

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২১ ০৮:০১

বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা কোনো গ্রাহককে উত্তরা গিয়ে জানতে হতে পারে, ওই ব্যাংকের শাখা খোলা মিরপুর বা মালিবাগে। মহাখালীর গ্রাহককে হয়ত গুলশান গিয়ে জানতে হতে পারে শাখা খোলা ফার্মগেটে। একটি জেলায় সর্বোচ্চ তিনটি শাখা খোলা থাকলে দূরের উপজেলার গ্রাহকদেরকে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে আসতে হবে। কিন্তু লকডাউনের এই সময়ে যেটি খুবই কঠিন, সময়সাপেক্ষ আর খরচও লাগবে বেশি।

শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধে ব্যাংকের লেনদেন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, তাতে গ্রাহকদের ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একটি বড় এলাকায় ব্যাংকের কেবল একটি শাখা খোলা থাকবে, তাও সীমিত সময়ের জন্য। কাজেই সেই শাখায় ভিড় বেশি হবে, সেটি সহজেই অনুমেয়।

আবার কোন শাখা খোলা, সেটি আগেভাগে জানার সুযোগ নেই। ফলে যান চলাচল বন্ধের মধ্যে ভোগান্তি সয়ে শাখায় গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হতে পারে গ্রাহকদের। কারণ, ব্যাংক খোলা থাকলেও সবগুলো শাখা খুলবে না, আর কোন শাখা খোলা সেটি কোনো একটি শাখায় না যাওয়া পর্যন্ত গ্রাহকের পক্ষে জানার সুযোগ নেই।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তৃতীয়বারের মতো কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মানুষের চলাচলে বাধা দিল।

২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটিতে জনসমাগম কমাতে অতটা বেগ পেতে হয়নি। কারণ, মানুষের মধ্যে সে সময় এমনিতেই আতঙ্ক ছিল।

গত ৫ এপ্রিল লকডাউন প্রথমবার যখন লকডাউন শব্দ ব্যবহার করে শুরু বিধিনিষেধ দেয়া হয়, সে সময় মানুষের বাইরে আসার প্রবণতা বেশি থাকে আর এক পর্যায়ে সরকারও ছাড় দিতে দিতে কমাতে থাকে বিধিনিষেধ। এক পর্যায়ে লকডাউন বলতে আর কিছুই কার্যত অবশিষ্ট থাকেনি।

এর মধ্যে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার পর দেশজুড়ে মানুষকে ঘরে রাখতে এবার দেয়া হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ যেটি পরিচয় পেয়েছে শাটডাউন নামে।

তবে এবারও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ব্যাংক। একে জরুরি সেবা হিসেবেই দেখা হয় আর জরুরি সেবা হিসেবে চালু থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

কোন কোন শাখা খোলা

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় প্রতিটি জেলা সদরে ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে।

অন্যান্য সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা সদরে একটি শাখা খোলা রাখতে হবে। জেলা সদরের বাইরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় অনধিক দুটি শাখা খোলা রাখা যাবে।

তবে রাজধানী ঢাকা বা অন্য চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে ব্যাংকের কয়টি শাখা খোলা থাকবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। আর এ নিয়ে বিভ্রান্ত খোদ ব্যাংকগুলোও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল বলেছে, যেসব শাখা বন্ধ থাকবে সেসব শাখার গ্রাহকদেরকে সেবা দেবে খোলা অন্য শাখা। আর বন্ধ শাখায় দৃশ্যমান স্থানে জানাতে হবে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানাতে হবে কোন কোন শাখা খোলা।

অর্থাৎ বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা কোনো গ্রাহককে উত্তরা গিয়ে জানতে হতে পারে, ওই ব্যাংকের শাখা খোলা মিরপুর বা মালিবাগে। বা মহাখালীর গ্রাহককে হয়ত গুলশান গিয়ে জানতে হতে পারে শাখা খোলা ফার্মগেটে।

এই বিধিনিষেধের সময়ে বাহন পাওয়াই যেখানে কঠিন, সেখানে গ্রাহককে পড়তে হবে বিড়ম্বনায়। কারণ, সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এই সময়টায় জরুরি পরিস্থিতি ছাড়া যন্ত্রচালিত যানবাহন চলতে পারবে না, চলবে কেবল রিকশা। উত্তরা থেকে মিরপুরে রিকশায় করে যাতায়াত সময় এবং খরচসাপেক্ষ ব্যাপার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদেরকে অনলাইনে ব্যাংকিংয়ে উৎসাহী করছে। কিন্তু বিশেষ করে প্রবীণরা এই ধরনের ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত নয়। আর প্রযুক্তি জ্ঞান যাদের নেই তারাও ব্যাংকে গিয়েই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।

বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাসহ বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, রেটিম্যান্ট, বেতনভাতা উত্তোলন, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল পরিশোধ বা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে এখনও বহু মানুষ ব্যাংকে স্বশরীরে গিয়েই লেনদেন করেন।

এই বিধিনিষেধ আবার শুরু হচ্ছে মাসের শুরুতে। আর এই সময়ে ব্যাংকে আনাগোনাও বেশি থাকে। সীমিত সংখ্যক খোলা শাখা ভোগান্তি তৈরি করতে পারে এ কারণে।

আবার একটি জেলায় যদি বেসরকারি ব্যাংকের সব মিলিয়ে তিনটি শাখা খোলা থাকে, তাহলে কাউকে ব্যাংকে যেতে হলে দূরের উপজেলা থেকে বহু পথ পারি দিতে হতে পারে।

যেমন কিশোরগঞ্জ জেলায় যদি কোনো ব্যাংককে তিনটি শাখা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে এর একটি হবে জেলা সদর। বাকিগুলোর একটি যদি এক প্রান্তে ভৈররে হয়, আর অন্যটি যদি ভাটি এলাকা মিঠামইন হয়, তাহলে কটিয়াদির গ্রাহককে কমপক্ষে ২৬ কিলোমিটার পারি দিয়ে তাকে ব্যাংকে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবালংাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারের ফলে ব্যাংকে চাপ বাড়বে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকেগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিতে পারবে না। কারণ, জেলা-উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা থাকলে অন্যান্য শাখার চাপও পড়বে। এছাড়া গ্রাহকও বুঝবে কীভাবে কোন শাখা খোলা রয়েছে? যদিও সামনে চারদিন ব্যাংক বন্ধ। কিন্তু বিধিনিষেধ বাড়লে তখন ব্যাংক সেবা আর একটু শিথিল করতে হবে।’

ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে ভিড় বাড়বে বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর। বলেন, ‘এটিএম বুথে টাকা তোলাতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, সেখানে বাটন স্পর্শে টাকা তুলতে হয়।‘

আবার এটিএম বুথ কেবল শহরাঞ্চলে আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা নেই। সেখানকার মানুষ নগদ টাকার প্রয়োজন কীভাবে মেটাবে, সে প্রশ্নও রাখেন তিনি।

যা বলছেন ব্যাংকাররা

কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রাধানিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সব শাখা অনলাইন সেবা চালু আছে। বিধিনিষেধে মানুষের চলাচলও কেমন থাকবে না। বর্তমানে বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা জমা ও উত্তোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে এটিএম বুথগুলোতে পর্যন্ত টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এতে গ্রাহকের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম কোরবান আলী বলেন, ‘আমাদের লোকাল অফিসে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চারদিনই ব্যাংক বন্ধ। তবে মানুষ চলাচল করতে পারলে ব্যাংকে সোমবার চাপ বেড়ে যাবে। তখন সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা দাঁড়াবে।’

এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের চাপ থাকলে সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয় না। অনেকে মানতেও চায় না।’

জনতা ব্যাংক করপোরেট শাখার কর্মকর্তা এস এম সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল প্রণোদনা ভাতা সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়, এ কারণে এসব ব্যাংকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। শাখা খোলা রাখার অর্থ ব্যাংকারদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকও ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে কিছু দিনের জন্য হলেও ব্যাংক বন্ধ রাখাই ভাল ছিল।’

বক্তব্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংক মুখপাত্রের

গ্রাহকদের এই সম্ভাব্য ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বুঝেশুনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর