বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমদানিতে জোয়ার, বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড ২০ বিলিয়ন ডলার

  •    
  • ১ জুলাই, ২০২১ ০০:২৮

‘আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হওয়া। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া। কিন্তু মহামারির কঠিন এই সংকটের সময়ে কি হয় সেটার এখন দেখার বিষয়। আমদানি যেটা বাড়ছে, সেটা যদি বিনিয়োগে না আসে, তাহলে কিন্তু বড় দুচিন্তার বিষয়।’

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলারের চূড়ায় উঠেছে। অর্থবছরের শেষের মাসের হিসাব পাওয়া গেলে এই ঘাটতি ২৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

৩০ জুন বুধবার শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর। এদিন এই অর্থবছরের ১১ মাসের (জুলাই-মে) বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাতে দেখা যায়, এই ১১ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে, ১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৮০ লাখ (প্রায় ২০ বিলিয়ন) ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি কমায় কিছুদিন পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি নিম্মমুখী ছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে আমদানি বাড়ায় এই ঘাটতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।

আর এর ফলে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতি বেড়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।

তবে আমদানি বাড়াকে অর্থনীতির জন্য ‘ভালো’হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতির দুই গবেষক আহসান এইচ মনসুর ও জায়েদ বখত।

তারা বলেছেন, ‘আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া; অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হওয়া।’

প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। জুলাই-মে সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি কমায় সদ্য শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ খানিকটা কম ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরে তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ঘাটতি ছিল ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ৮২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেই ঘাটতি বেড়ে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে ওঠে। আট মাসে অর্থাৎ জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। জুলাই-মার্চে তা আরও বেড়ে হয় ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। জুলাই-এপ্রিল সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ জুলাই-মে সময়ে উঠেছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে কোনো অর্থবছরেই এত বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ।

এই ১১ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে। আর আমদানিতে ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৪২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জুলাই-মে সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল একটু বেশি; ২৩৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিও বাড়ছে

অর্থবছরের শেষ দিকে এসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত আর ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে।

তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৯৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। জুলাই-মে সময়ে তা দ্বিগুণ বেড়ে ১৮৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়েছে।

অথচ অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল ১৩৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে উদ্বৃত্ত মাত্র ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে আসে।

আমদানি বাড়ায় লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত কমছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসস) গবেষক রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, এখনকার মতো অর্থবছরের বাকি এক মাসে আমদানি বাড়লে এবার বাণিজ্য ঘাটতি ২৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

‘তবে আশার কথা হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। সবাই বুঝতে পেরেছে, করোনাকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। সে কারণে আমদানিতে যে মন্দাভাব ছিল, সেটা আর নেই। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো।’

আরেক অর্থনীতিবিদ গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হওয়া। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া।’

‘কিন্তু মহামারির কঠিন এই সংকটের সময়ে কি হয় সেটার এখন দেখার বিষয়। আমদানি যেটা বাড়ছে, সেটা যদি বিনিয়োগে না আসে, তাহলে কিন্তু বড় দুচিন্তার বিষয়।’

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি ছিল ৫১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৯৫৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

রেমিট্যান্সে ঢল

মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি মাসেই বাড়ছে এই অংক। অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে এই সূচক।

অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। আগের বছর এই ১১ মাসে পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য

তবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) এখনও বড় উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ১১ মাসে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫১ কোটি ৯০ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এই উদ্বৃত্ত ছিল ১৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

আর্থিক হিসাবেও বড় উদ্বৃত্ত

আর্থিক হিসাবেও (ফাইন্যানশিয়াল অ্যাকাউন্ট) বড় উদ্বৃত্ত ধরে রয়েছে। অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৭৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। জুলাই-নভেম্বর সময়ে তা ৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার উদ্বৃত্তে চলে আসে। ছয় মাসে সেই উদ্বৃত্ত বেড়ে হয় ২২০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

সাত মাসে তা আরও বেড়ে ৪৪৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়। আট মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৫৬১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। নয় মাস শেষে তা আরও বেড়ে ৬৯৪ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়।

১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে সেই উদ্বৃত্ত ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে এক হাজার ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারে উঠেছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের এই ১১ মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ৬০১ কোটি ২০ লাখ ডলারের

এ বিভাগের আরো খবর