বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্রাহক পণ্য পেলেই ই-কমার্সকে টাকা ছাড়

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২১ ২২:৪৬

গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য পৌঁছে দেয়ার আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা পাবে না। পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে। আর এই মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের বিষয়েই সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রির জন্য যে অগ্রিম টাকা নিয়ে থাকে, তা এখন থেকে থাকবে ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংক বা এ ধরনের বিভিন্ন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের কাছে। ক্রেতা পণ্য হাতে পাওয়ার পর সেই টাকা যাবে ই কমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে।

আগে টাকা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ না করার যে অভিযোগ আছে, তা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার অংশ হিসেবে বুধবার এই আদেশ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ক্রেতাদের স্বার্থ নিশ্চিত করতে ই-কমার্স ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চত করতে দেশের সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠানসহ এর সঙ্গে যুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নির্দেশনায় ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস) কর্তৃক ইস্যুকৃত ভাউচারের বিপরীতে পণ্য ক্রয়/ সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্তু অর্থ ছাড় না করতে সব ব্যাংক, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডর (পিএসপি) এবং পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটরদের (পিএসও) নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সেইসঙ্গে ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাবিকৃত খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করতে বলা হয়েছে।

বুধবার রাতে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ নির্দেশনাসহ মোট ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

‘ডিজিটাল কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্য/ সেবার বিপরীতে গ্রাহকের পরিশোধিত অর্থ ব্যাংক/ পিএসও/এমএফএস ও পিএসপিসমূহ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট) এর অনুকূলে ছাড়করণ’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘ক্রমবিকাশমান ডিজিটাল কমার্সের মূল্য পরিশোধকল্পে ব্যাংক/ পিএসও এবং ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানকারী এমএফএস/ পিএসপি (পরিশোধ সেবাদানকারী)-সমূহ পরিশোধ সেবা প্রদান করছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গ্রাহকের নিকট হতে সংগৃহীত অর্থ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করার পরও অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাহকের পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে বা পণ্য পাচ্ছেন না।

‘এর ফলে গ্রাহক ও পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, যা ডিজিটাল কমার্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে।’

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু এমন ই-কমার্স সাইট তৈরি হয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে কোম্পানিগুলোকে আগে টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পণ্য সরবরাহ করে।

তবে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহে বারবার সময়ক্ষেপণের অভিযোগ আছে। আবার তাদের ব্যবসার কৌশলটিও স্পষ্ট নয়। এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে জনগণের মধ্যে।

এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য পৌঁছে দেয়ার আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা পাবে না।

ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে। আর এই মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের বিষয়েই সিদ্ধান্ত জানাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নির্দেশনায় যা যা আছে

১. খাদ্য, মুদি, ওষুধ, রাইড শেয়ারিং, মোবাইল রিচার্জ, সার্ভিস ডেলিভারি বা ইউটিলিটি, এডুকেশন ফি, হোটেল বুকিং, টিকেটিং (বাস, এয়ার, ট্রেন, লঞ্চ) বা অনুরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য/সেবা সঙ্গে সঙ্গে বা অনধিক ৫ (পাঁচ) দিনের (পণ্য/সেবার ধরন ও স্থান বিবেচনায়) মধ্যে সরবরাহকারী ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে পারবে।

২. নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য/সেবা বা দোকান বা শো-রুম (এইরূপ উদ্দেশ্যে ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্ত) এর মাধ্যমে পণ্য/সেবা বিক্রয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল কমার্স ব্যবস্থায়ও পণ্য/সেবা বিক্রয় করে এবং বিক্রিত পণ্য/সেবা সঙ্গে সঙ্গে বা অনধিক ৭ (সাত) দিনের (পণ্য/সেবার ধরন ও স্থান বিবেচনায়) মধ্যে সরবরাহ করে থাকে এইরূপ ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ লেনদেনের ঝুঁকি, গ্রাহকসেবার মান, পণ্য/সেবা সরবরাহ সম্পর্কে সন্তুষ্টি এবং পারস্পরিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ইত্যাদি পর্যালোচনা করে স্বীয় বিবেচনায় বিদ্যমান সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে পারবে।

৩. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান(মার্কেটপ্লেস) কর্তৃক ইস্যুকৃত ভাউচার এর বিপরীতে পণ্য ক্রয়/ সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্তু অর্থ ছাড় করা যাবে না। ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাবিকৃত খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করা যাবে।

৪. পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত এরূপ অর্থ মার্চেন্ট দায় পরিশোধ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না এবং অপরিশোধিত মার্চেন্ট দায়ের সমপরিমাণ অর্থ এ হিসাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৫. রিফান্ড বা চার্জব্যাকের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধিত মাধ্যমেই উক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে এক্ষেত্রে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হলে তা ডিজিটাল কমার্স সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।

৬. সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনো চার্জ/মাশুল আরোপ করতে পারবে না।

৭. গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা প্রাপ্তির পর পরিশোধের (ক্যাশ অন ডেলিভারি) বিদ্যমান পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে।

৮. বর্ণিত নির্দেশনাসমূহ শুধুমাত্র ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

৯. ১ ও ২ এ বর্ণিত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ নিজস্ব সেটেলমেন্ট হিসাবে ধারণ করবে এবং সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এই অর্থ ছাড়করার জন্য নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করবে:

ক. সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহককে পণ্য/সেবা সরবরাহের পর অর্থ ছাড়করণের জন্য গ্রাহকের নাম, মোবাইল নম্বর এবং ক্রয়াদেশের বিবরণসহ এ সংক্রান্ত একটি তালিকা ব্যাংক/ পিএসও এবং ই-ওয়ালেট সেবা প্রদানকারী এমএফএস/ পিএসপি (পরিশোধ সেবাদানকারী) প্রতিষ্ঠানকে দেবে।

খ. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত ক-এ বর্ণিত তালিকা হতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে গ্রাহকের পণ্য/সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সন্তুষ্ট হওয়া সাপেক্ষে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ ছাড় করবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবে।

ই কমার্স সাইট কীভাবে অর্থ পাবে, সেটি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গ. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্য/ সেবা সরবরাহের বিপরীতে অর্থ ছাড়করণের জন্য দাবিকৃত তালিকার কোনো গ্রাহকের পণ্য/ সেবা সরবরাহ না হওয়ার বিষয়ে পরে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সঙ্গে সঙ্গে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেবে এবং নোটিশ পাওয়ার অনধিক ১০ দিনের মধ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠান জবাব প্রদান করবে।

ঘ. ভুল তথ্য প্রদানের বিষয়ে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক কারণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদান স্থগিত করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত করে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এ ধরনের তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরে সকল প্রকার পরিশোধ সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা হারাবে।

এবং

ঙ. ভবিষ্যতে অর্থ ছাড়করণের প্রক্রিয়াটি অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবে, যেখানে গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা সরবরাহ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণের বিষয়টি অন্তুর্ভুক্ত থাকবে।

৪. ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস) কর্তৃক ইস্যুকৃত ভাউচার এর বিপরীতে পণ্য ক্রয়/সেবা গ্রহণ না করা পর্যন্তু অর্থ ছাড় করা যাবে না। ভাউচার ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাবিকৃত খরচের অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে খরচের সমপরিমাণ অর্থ ছাড় করা যাবে।

৫. পরিশোধ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ মার্চেন্ট দায় পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না এবং অপরিশোধিত মার্চেন্ট দায়ের সমপরিমাণ অর্থ এ হিসাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৬. রিফান্ড বা চার্জব্যাকের ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধিত মাধ্যমেই উক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে এক্ষেত্রে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হলে তা ডিজিটাল কমার্স সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।

৭. অত্র সার্কুলারের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য পরিশোধ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কোনোরূপ চার্জ/মাশুল আরোপ করতে পারবে না।

৮. এছাড়া গ্রাহক কর্তৃক পণ্য/ সেবা প্রাপ্তির পর পরিশোধের (ক্যাশ অন ডেলিভারি) বিদ্যমান পদ্ধতি অব্যাহত থাকবে।

৯. নির্দেশনাগুলো কেবল ব্যক্তি গ্রাহক পর্যায়ের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এ বিভাগের আরো খবর