আগাম টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহে সময়ক্ষেপণে বিভিন্ন ই কমার্স সাইটের প্রবণতার মধ্যে এবার পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে দিতে যাচ্ছে সরকার।
গ্রাহক অন্য কোনো শহরে থাকলে বা তিনি গ্রামের হলে সময় নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ১০ দিন। তবে বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মুল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ওই পণ্য ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতে হবে। আর বিষয়টি ক্রেতাকে টেলিফোনে, ই-মেইলে কিংবা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে, যাতে বলা আছে, কোনো গ্রাহক পণ্য অর্ডার করলে তাকে একই শহরে হলে পাঁচ দিনের মধ্যেই তা সরবরাহ করতে হবে।
এই ধরনের নির্দেশনা রেখে দেশে ডিজিটাল কমার্স (ই-কমার্স) পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১ চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শিগগিরই নির্দেশনাটির আইনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে নীতিমালাটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু এমন ই-কমার্স সাইট তৈরি হয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের অবিশ্বাস্য ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। তবে কোম্পানিগুলোকে আগে টাকা পরিশোধ করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর পণ্য সরবরাহ করা হয়।
তবে টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহে বারবার সময়ক্ষেপণের অভিযোগ আছে। আবার তাদের ব্যবসার কৌশলটিও স্পষ্ট নয়। এ কারণে নানা সন্দেহ-সংশয় আছে জনগণের মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতে গত ২৪ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য পৌঁছে দেয়ার আগে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা পাবে না।
ক্রেতার অর্ডার করা পণ্য হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ওই পণ্যের পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে জমা হবে না। এ জন্য পণ্য অর্ডারের বিপরীতে পরিশোধিত টাকা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সরকার অনুমোদিত মিডলম্যান প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা থাকবে।
অর্ডার করা পণ্য ক্রেতা হাতে পাওয়ার পর ডেলিভারিম্যানের কাছে দেয়া সইযুক্ত রিসিভ কপি জমা দিলেই পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে টাকা ছাড় হবে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটওয়ে সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে করা হবে।
এর মধ্যে এবার পণ্য কত দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে, সেটিও নির্দিষ্ট করে দিতে চাইছে সরকার।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে বুধবার ডিজিটাল কমার্স (ই-কমার্স) পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২১ চূড়ান্তকরণবিষয়ক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্ত করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ডব্লিউটিও সেল) ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে দ্রুত বিকাশমান এই খাতটিতে একটা শৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘নীতিমালার খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভেটিংয়ে দেবো।
‘ভেটিং কাজ শেষ হলেই তা ই-কমার্স খাতের সুষ্ঠু পরিচালনায় গেজেট জারি ও প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে আইন মন্ত্রণালয় নীতিমালাটির মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের প্রয়োজন মনে করলে সে ক্ষেত্রে একটু সময় লাগতে পারে।’
বৈঠকে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে অংশ নেয়া ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ আলম তমাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খুশি এ কারণে যে একটি কংক্রিট নীতিমালা প্রণয়নের খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। সেখানে আমাদেরও মতামত ছিল।
‘সরকার এবং স্টেকহোল্ডার উভয়ে মিলে সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাতকে সব ধরনের ঝুঁকি ও বিতর্কমুক্ত রাখতে এবং ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে যে ধরনের নির্দেশনা দরকার ছিল, তার সবই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে সবাই উপকৃত হবে।’
নীতিমালায় যা যা আছে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়, অনলাইন বিজনেস করতে হলে নীতিমালা মানতে হবে। যারা মানবে না সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। ক্রেতারাও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আদালতে মামলা করতে পারবে।
নীতিমালায় বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা যাবে না। নকল, ভেজাল পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয় করা যাবে না। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নিয়ম যথাযথ পরিপালন করতে হবে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তার সনদ নিশ্চিত করতে হবে।
পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের উপাদান ও উপাদানের পরিমাণ, রাসায়নিক গঠনের বিবরণ থাকতে হবে।