এক বিনিয়োগকারী রসিকতা করে পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক একটি ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, সোনালী লাইফের আইপিও বিক্রি করে একটি সিগারেট কিনবেন তিনি।
আরেকজন লিখেছেন, টানা ২০ দিন সর্বোচ্চ পরিমাণে দাম বাড়লেও শেয়ারমূল্য ৫০ টাকা হবে কি না।
এই ৫০ টাকা দাম হলে তার মুনাফা ৬৮০ টাকার মতো হবে।
নতুন শেয়ার লেনদেনে এমন চিত্র পুঁজিবাজারে আগে আসেনি কখনও।
১০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে প্রথম দিন থেকেই দাম বাড়া-কমায় ১০ শতাংশের সীমা। আর এই এক টাকা বেশি দামে লেনদেন হয়েছে বেশ কিছু শেয়ার।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বেশ কয়েক দিন থেকেই ইতিহাস। এটিই প্রথম কোম্পানি, যার শেয়ার চেয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে যারা আবেদন করেছেন, তাদের সবার মধ্যে বণ্টন হয়েছে। একে বলা হচ্ছে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টন।
এর আগ পর্যন্ত শেয়ার বণ্টন হতো লটারির মাধ্যমে। আর একেকজন পেতেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার। সেটি ২০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত হয়েছে।
আবার নতুন শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন কোনো মূল্যসীমা না থাকার সুযোগে ১৬ গুণ দাম ওঠার রেকর্ডও আছে। যদিও ২০১৯ সালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিধান করে প্রথম দুই দিন তালিকাভুক্ত হওয়া দামের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারবে। সেটিও বাতিল করার পর সোনালী লাইফই প্রথম কোম্পানি, যার শেয়ারে ১০ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হয়েছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজে সোনালী লাইফ নিয়ে এক বিনিয়োগকারীর পোস্ট
সম্প্রতি ওটিসি মার্কেট থেকে যে চারটি কোম্পানি ফিরেছে, তার মধ্যে তিনটি কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখা গেছে দাম দ্বিগুণ হওয়ার আগে কোনো দিন একটি, কোনো দিন দুটি বা কোনো দিন এ রকম নগণ্যসংখ্যক শেয়ার বিক্রি হয়েছে।
সোনালী লাইফের ক্ষেত্রেও এমনটিই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। দিন শেষে ৪৬ বারে ১ হাজার ১০১টি শেয়ার তাই বিস্ময় তৈরি করেছে। তবে ১১ টাকায় অর্ডার ছিল ৫ কোটির বেশি শেয়ারের।
আনুপাতিক হারে সবাই শেয়ার পেলেও বিনিয়োগকারীরা হতাশ। কারণ, ১০ হাজার টাকা আইপিওতে জমা দিয়ে কেউ পেয়েছেন ১৭টি, আর ২০১০ সালের ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন ২২টি, প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা ৩৩টি।
যারা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আইপিও আবেদন করেছেন, তারা পেয়েছেন ৫ গুণ শেয়ার।
তাদের মধ্যে যে ১ হাজার ১০১টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তারা সব মিলিয়ে মুনাফা পেয়েছেন ১ হাজার ১০১ টাকা মাত্র। যিনি ১৭টি শেয়ার পেয়েছিলেন তার মুনাফা ১৭ টাকা, যিনি ২২টি পেয়েছেন তার ২২ টাকা, যিনি ৩৩টি পেয়েছেন তার ৩৩ টাকা।
এর আগে আইপিওর শেয়ারে এত কম মুনাফা কখনও পাওয়া যায়নি। এত কম শেয়ার একেকজন পেয়েছেন যে, দাম বেড়ে ৫ গুণ হয়ে গেলেও তারা যে মুনাফা পাবেন, তা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করলে কোনো একটি ভালো দিনেই এর চেয়ে বেশি পেতে পারতেন।
চলতি বছর তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের এনআরবিসির শেয়ারেও প্রথম দিন ৩৫ শতাংশ মুনাফা পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এই শেয়ারে অবশ্য প্রথম দুই দিনে ৫০ শতাংশ করে দাম বৃদ্ধির সুযোগ ছিল।
বুধবার লেনদেনের দুই ঘণ্টায় সোনালী লাইফের ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭১২টি শেয়ার কেনার অর্ডার পড়ে সর্বোচ্চ দাম ১১ টাকায়। কিন্তু এই দামে খুব কমসংখ্যক শেয়ার বিক্রিতে রাজি ছিলেন আইপিওধারীরা।
তিনি সোনালী লাইফের আইপিও পেয়েছেন নাকি রসিকতা করেছেন, সেটি বোঝার উপায় নেই
সোনালী লাইফের আগে গত কয়েক বছরে যেসব কোম্পানির আইপিও এসেছে, তার মধ্যে প্রথম দিন সবচেয়ে কম মুনাফা দিয়েছে এনআরবিসিই। এ ছাড়া যেসব কোম্পানি এসেছে, তার মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবগুলো প্রথম দুই দিন ৫০ শতাংশ করে বেড়ে পরে ১০ শতাংশ করে বেড়েছে টানা কয়েক দিন। এর মধ্যে রবির শেয়ার ১০ টাকায় আইপিওতে এসে ৭৭ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
গত নয় মাসে যেসব কোম্পানি এসেছে, তার মধ্যে কেবল মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ২০০টি করে শেয়ার। অন্য কোম্পানির ৫০০টি করে শেয়ার পেয়েছেন একেকজন। এ কারণে দাম দ্বিগুণ বা তিন গুণ হলে তারা বেশ ভালো অঙ্কের মুনাফা অর্জন করেছেন। আর মীর আকতার ছাড়া বাকিগুলোতে বিনিয়োগ ছিল ৫ হাজার টাকাই।
কিন্তু সোনালী লাইফে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেও নগণ্যসংখ্যক শেয়ার পাওয়ার কারণেই মূলত এই হাস্যরস হচ্ছে।