শাটডাউনে ব্যাংক সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ থাকার নির্দেশনা আসায় পুঁজিবাজারও এক দিন অতিরিক্ত সময় বন্ধ থাকবে। ব্যাংকের সঙ্গে মিল রেখে লেনদেনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
১ জুলাই বৃহস্পতিবার জুন ক্লোজিংয়ের কারণে ব্যাংক হলিডে থাকায় আগামী চার দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে না। ফলে সোমবার থেকে নতুন সময়সীমা প্রযোজ্য হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শাটডাউনে পুঁজিবাজারের লেনদেন ব্যাংকের সময় সীমার সঙ্গে সমন্বয় করে রাখা হয়েছে। ব্যাংক ১০ টাকা থেকে দেড়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। পুঁজিবাজারের লেনদেন চলবে সকাল ১০ টাকা থেকে একটা পর্যন্ত।’
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়ার পর থেকে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমা কমানা হলেও সপ্তাহে ৫দিনই খোলা রাখা হয়। তবে এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক লেনদেনের সময় সীমা কমানোর পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়িয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে লেনদেন।
আর পুঁজিবাজারে লেনদেনে জন্য ব্যাংক খোলা থাকতে হয়। তাই রোববার আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় পুঁজিবাজারও বন্ধ রাখতে হবে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খোলা থাকলেও শাটডাউন চলাকালে বিনিয়োগকারীরা ব্রোজারেজ হাউজে গিয়ে লেনদেন করতে পারবেন না। অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে বা ফোনে কেনাবেচার অর্ডার দিতে হবে।
শাটডাউনে ব্রোকারেজ হাউজে যাওয়া যাবে না, লেনদেনের অর্ডার দিতে হবে অনলাইনে
ব্রোকারেজ হাউজকে তাদের কর্মীদের আনা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে এবার সারাদেশে চলমান বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে সরকার, যা পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন হিসেবে।
গত বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা জানানোর পর থেকেই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়। গত ৫ এপ্রিল লকডাউন দেয়ার পরও পুঁজিবাজার খোলা থাকা এবং এবারও চালু রাখার ইঙ্গিত পাওয়ার পরও রোববার সূচক কমে ১০০ পয়েন্ট।
এরপর সরকার সিদ্ধান্ত কিছুটা পাল্টে সোমবার থেকে শাটডাউন না দিয়ে সীমিত লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই সময়ে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমা না পাল্টানোয় পুঁজিবাজারেও তিন দিন লেনদেন চলে আগের সময়েই।
তবে বুধবার সেখানে সাড়ে ১১টার সময় ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ তথা শাটডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সেখানে জরুরি সেবা হিসেবে কী কী চালু থাকবে, তার মধ্যে ব্যাংক থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি জন্ম নেয় যে, পুঁজিবাজারও চালু থাকবে।
২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটি ঘোষিত হলে ব্যাংক চালু থাকলেও ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার। তবে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার পক্ষে না।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি লকডাউনে পুঁজিবাজার বন্ধের পক্ষে নয়
৫ এপ্রিল লকডাউনের ঘোষণা আসার আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্যাংক চালু থাকলে পুঁজিবাজারেও লেনদেন চলবে। তবে ব্যাংক খোলা রাখার প্রজ্ঞাপন আসতে একদিন দেরি হলে ৪ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক হারায় ১৮১ পয়েন্ট।
সেই বিকেলেই আসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা যে, লকডাউনে চালু থাকবে পুঁজিবাজার। আর ৫ এপ্রিল থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় সূচক। তিন মাসেরও কম সময়ে সূচকে যোগ হয় এক হাজার পয়েন্টের বেশি।
এবার শাটডাউনের পরিকল্পনা ঘোষাণার পরও ব্যাংক আর পুঁজিবাজার চালু থাকার ইঙ্গিত মেলে। তবু অস্থির হয়ে গত রোববার কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেন বহু বিনিয়োগকারী। তারাই এখন আফসোস করছেন।
কারণ, সোম থেকে বুথবার আগের সময় অনুযায়ী লেনদেন চলবে সিদ্ধান্ত আসার পর দুই দিন পুঁজিবাজারের সূচকে যোগ হয় ৫০ পয়েন্ট। তবু শাটডাউনে কী হয়, এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ যে সংশয়ে ছিল, তা বোঝা যায় লেনদেনে।
দুই হাজার কোটির ঘর থেকে মঙ্গলবার লেনদেন নেমে আসে এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাটডাউনে রোববারও বন্ধ থাকবে ব্যাংক। তাই পুঁজিবাজারও সেদিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে
বুধবার লেনদেন চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টায় আসে শাটডাউনের প্রজ্ঞাপন। এতেও উল্লেখ থাকে, খোলা থাকবে ব্যাংক। আর বিএসইসির আগের ঘোষণা থাকায় বিনিয়োগকারীদের মনে সামান্য যে সংশয় ছিল, সেটিও উবে যায়।
এই ঘোষণা আসার পরে তিন ঘণ্টায় সূচকে যোগ হয় ৬১ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে দিনে ১০৮ পয়েন্ট।
ফলে শাটডাউন আতঙ্কে সূচকের যত পতন হয়েছিল, পরের তিন দিনে সেটি ফিরে পাওয়ার পরে বেড়েছে আরও ৫৮ পয়েন্ট। আর লেনদেন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।