করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া কঠোর বিধিনিষেধে ব্যাংকে লেনদেন চলবে সাড়ে তিন ঘণ্টা। আর সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে তিন দিন।
ফলে শুক্র থেকে রোববার ব্যাংকে লেনদেন বন্ধ থাকবে।
সকাল ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে বলে জানিয়েছে হয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক খোলা থাকবে তিনটা পর্যন্ত। বাকি দেড় ঘণ্টা ব্যাংকের আনুষঙ্গিক কাজ চলবে।
এই সময়সীমা কার্যকর হচ্ছে আগামী সোমবার থেকে।
১ জুলাই বৃহস্পতিবার ব্যাংক খোলা থাকলেও জুন ক্লোজিং এর জন্য কোনো গ্রাহক লেনদেন করতে পারবে না। আর এরপর দুইদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। বিধি-নিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ প্রতি রোববার ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে নতুন নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে সময়সীমা কমিয়ে সাধারণ ছুটি বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাংকের চালু শাখার সংখ্যাও কমানো হয়েছে। সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে জেলা সদর আর উপজেলায় একটি করে চালু থাকবে। আর বেসরকারি ব্যাংক জেলা সদরে একটি আর জেলায় গুরুত্ব অনুযায়ী খোলা থাকবে আর দুটি।
লেনদেন অনলাইনে করার ক্ষেত্রেই উৎসাহ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চালু থাকবে কার্ড সেবাও।
দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার থেকে নতুন করে বিধিনিষেধে গেছে দেশ।
গত বৃহস্পতিবার প্রথম সরকারের পক্ষ থেকে শাটডাউনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
গত ৫ এপ্রিল থেকেই লকডাউন তথা বিধিনিষেধ চলে আসলেও এবার সেনাবাহিনী নামানোর ঘোষণাতেই স্পষ্ট হয় সরকার কঠোর হচ্ছে।
এই শাটডাউন শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকেই। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট পাসের কারণে সেটি পিছিয়ে দেয়া হয়, যদিও সোমবার থেকে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সোম থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ‘সীমিত লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ দেয়ার পর তিন দিন ব্যাংকের সময়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্তই গ্রাহকদেরকে সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধে এই গ্রাহকসেবার সময় কমিয়ে প্রজ্ঞাপন আসে বিকেলে।
চালু থাকবে না সব শাখা
সার্কুলারে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় প্রতিটি জেলা সদরে ও উপজেলায় একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে।
অন্যান্য সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা সদরে একটি শাখা খোলা রাখতে হবে। জেলা সদরের বাইরে ব্যাংক ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় অনধিক দুটি শাখা খোলা রাখা যাবে।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অত্যাবশ্যকীয় বিভাগগুলো যথাসম্ভব সীমিত লোকবলের মাধ্যমে খোলা রাখতে হবে।
ব্যাংকের প্রিন্সিপাল বা প্রধান শাখা এবং সব বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা (এডি শাখা) সীমিত সংখ্যক অত্যাবশ্যকীয় লোকবলের মাধ্যমে খোলা রাখতে হবে।
যেসব শাখা বন্ধ থাকবে সেসব শাখার গ্রাহকদেরকে সেবা দেবে খোলা অন্য শাখা।
আর বন্ধ শাখায় দৃশ্যমান স্থানে জানাতে হবে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানাতে হবে কোন কোন শাখা খোলা।
এটিএম বুথ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু রাখতে হবে
সার্কুলারে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে।
ব্যাংক কর্মীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে
সকল খোলা রাখা শাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনপূর্বক সীমিত সংখ্যক লোকবলের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
বিধি-নিষেধ চলাকালে ব্যাংকের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের অফিসে আনা-নেয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে প্রতিষ্ঠানকেই।
ব্যাংক কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের চলাচলের সময় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র বহন করতে হবে।
বিধিনিষেধে যেসব ব্যাংকিং সেবা চালু থাকবে
গ্রাহকদের হিসাবে নগদ বা চেকের মাধ্যমে অর্থ জমা ও উত্তোলন, ডিমান্ড ড্রাফট বা পে-অর্ডার ইস্যু ও জমা গ্রহণ, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের অর্থ পরিশোধ, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় প্রদত্ত ভাতা বা অনুদান বিতরণ, একই ব্যাংকের খোলা রাখা বিভিন্ন শাখা ও একই শাখার বিভিন্ন হিসাবের মধ্যে অর্থ স্থানান্তর, ট্রেজারি চালান গ্রহণ, অনলাইন সুবিধা সম্বলিত ব্যাংকের সকল গ্রাহকের এবং উক্ত সুবিধা বহির্ভুত ব্যাংকের খোলা রাখা শাখার গ্রাহকদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চালু রাখা বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমস্ বা ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন অন্যান্য লেনদেন সুবিধা প্রদান ও জরুরি বৈদেশিক লেনদেন সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু থাকবে।
সমুদ্র, স্থল, বিমানবন্দর এলাকায় ব্যাংকের শাখা সার্বক্ষণিক খোলা
সমুদ্র, স্থল, বিমান বন্দর এলাকায় (পোর্ট ও কাস্টমস এলাকা) অবস্থিত ব্যাংকের শাখাবা উপ-শাখা বা বুথগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর, কাস্টমস কর্তৃক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিতপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।