বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মনের বাঘের ভয়’ কেটে ঝলমলে পুঁজিবাজার

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২১ ১৪:৫০

শাটডাউন আতঙ্কে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক যত পড়েছিল, পরের তিন দিনে তা উদ্ধার করেও বাড়ল আরও ৫৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ ১০০ পয়েন্ট পতনের পর তিন দিনে উত্থান হলো ১৫৮ পয়েন্ট।

এপ্রিল থেকে চলমান লকডাউনে পুঁজিবাজার চালু থাকার পরেও শাটডাউন আতঙ্কে রোববার পতন ১০০ পয়েন্ট। তবে ‘সীমিত লকডাউনে’ পুঁজিবাজার চালু থাকার নিশ্চয়তা পাওয়ার দুই দিনে উদ্ধার ১০০ পয়েন্ট। আর ‘শাটডাউন’ নামে পরিচিতি পাওয়া ‘কঠোর বিধিনিষেধেও’ বাজার চালু থাকা নিশ্চয়তা পাওয়ার পর সূচকে যোগ ১০৮ পয়েন্ট।

দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা বারবার যে অস্থিরতায় ভুগে পুঁজি হারান, তার নমুনা এপ্রিলের শুরুতে দেখা গিয়েছিল। লকডাউনে লেনদেন চালু থাকবে ইঙ্গিত থাকার পরেও বাজারে নামে ধস। আর লকডাউনের শুরুর দিন থেকে শুরু হয় উত্থান। তিন মাসেরও কম সময়ে পুঁজিবাজারে যোগ হয় এক হাজার পয়েন্টেরও বেশি। তারপরের বিনিয়োগকারীদের ‘মনের বাঘের ভয়’ যায়নি।

লকডাউন, শাটডাউন যাই হোক না কেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে, এমন ইঙ্গিত ছিল আগেই। কিন্তু চলমান বিধিনিষেধেও পুঁজিবাজার চালু থাকার পরও ‘মনের বাঘে’র ভয়ে ভীত বিনিয়োগকারীরা ছিল অস্থিরতায়।

সোমবার থেকে সীমিত লকডাউনের আগে রোববার ১০০ পয়েন্ট সূচকের পতনেই বোঝা যায় আতঙ্ক ভর করেছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। আর সেদিনই আসে প্রজ্ঞাপন। জানানো হয়, খোলা থাকবে ব্যাংক। আর পরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও জানায়, লেনদেন চলবে পুঁজিবাজারেও।

তবে সেই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল যে, বৃহস্পতিবার থেকে আসবে কঠোর বিধিনিষেধ, যেটি এবার পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।

শাটডাউনে সেনাবাহিনী নামবে, জরুরি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান খুলবে না, এ কথা জানানো হয়েছে বারবার। আর এ কারণে, বিনিয়োগে না গিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণে ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে সোম ও মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে সূচক উঠানামার মধ্যে বেড়েছে। তবে লেনদেনে ছিল না গতি।

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে লেনদেন চলার সময় যখন এই শাটডাউনের প্রজ্ঞাপন আসে, তাতে উল্লেখ ছিল, খোলা থাকবে ব্যাংক। আর বিএসইসির আগেরই ঘোষণা ছিল, ব্যাংক খোলা থাকলে খুলবে পুঁজিবাজারও।

সকাল থেকেই বাজার ছিল ইতিবাচক। আর প্রজ্ঞাপন আসার আগ পর্যন্ত বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সূচক আগের দিনের চেয়ে বাড়ে ৪৭ পয়েন্ট। তবে প্রজ্ঞাপন আসার পর সেখান থেকে দেয় লাফ। এখান থেকে তিন ঘণ্টায় সূচক বাড়ে আরও ৬১ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে আগের দিনের তুলনায় সূচক বাড়ে ১০৮ পয়েন্ট। আর শাটডাউন আতঙ্কে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক যত পড়েছিল, পরের তিন দিনে তা উদ্ধার করেও বাড়ল আরও ৫৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ ১০০ পয়েন্ট পতনের পর তিন দিনে উত্থান হলো ১৫৮ পয়েন্ট।

এই চিত্র এর আগে দেখা যায় গত ৫ এপ্রিল লকডাউনের প্রজ্ঞাপন আসার আগে।

কী কী চালু থাকবে এ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে ৪ এপ্রিল সূচকের পতন হয় ১৮১ পয়েন্ট। আর লকডাউনের প্রথম দুই দিনেই যোগ হয় ১৯৬ পয়েন্ট।

প্রধান সব খাতেই দাম বৃদ্ধি

পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা গেছে, কোনো একটি বা দুটি খাতের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য খাতের বিনিয়োগকারীরা হতাশ হন।

তবে শাটডাউনের প্রজ্ঞাপন আসার দিন ব্যাংক, আর্থিক, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, জ্বালানি, বিমা, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র এবং বিবিধ খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে।

বিমা খাতে প্রায় সব কোম্পানির দর সর্বোচ্চ সীমায়

বিমা খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে বুধবার ২টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিল। বাকি ৪৯টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০টির ৬টি আর ২০টি কোম্পানির ১২টি ছিল এই খাতের।

শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে প্রথম লেনদেনে আসা সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ১০ শতাংশ বেড়ে দাম হয়েছে ১১ টাকা। নতুন শেয়ার লেনদেনের প্রথম দিন এই প্রথম সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য হলো।

একই হারে শেয়ার দর বেড়েছে নর্দান ইন্স্যুরেন্সের দর; ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬১ টাকা ৬০ পয়সা।

তারপরেই ছিল ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯.৯৬ শতাংশ। শেয়ার দর ৫৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৪ টাকা।

সন্ধানী লাইফ ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ৯.৯২ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ৯.৯১ শতাংশ, এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্সের ৯.৮৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৯.৮৮ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৯.৮৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।

জনতা, রূপালী, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও বেড়েছে ৯ শতাংশ পর্যন্ত।

এছাড়া ছয়টির বেশি কোম্পানি আছে যেগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। এদিন বিমা খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২৩৪ কোটি টাকা।

দুটি ছাড়া সব ব্যাংকের দাম বৃদ্ধি

শতকরা হারে কম থাকলেও ৩১টির মধ্যে ২৯টি শেয়ারের দাম বৃদ্ধি ব্যাংক খাতে সাম্প্রতিক আগ্রহ বৃদ্ধির আরও একটি নমুনা হিসেবে দেখা যায়।

অন্য যে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়েনি, সেটিও দামও কমেনি, ছিল অপরিবর্তিত।

তবে এই খাতের কোম্পানির দাম বাড়ার হার শতকরা হিসেবে খুব একটি বেশি নয়। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির একটিও ছিল না এই খাতের।

ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৭.৬৯ শতাংশ। ব্যাংক খাতের সবচেয়ে দুর্বল এই ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর ৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ২০ পয়সা।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ৪.৫৭ শতাংশ, পূবালী ব্যাংকের ৪.৪৩ শতাংশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৩১ শতাংশ আর এবি ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে ৩.৪৯ শতাংশ।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৫২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

প্রকৌশলের চমক

অর্থবছরের শেষ দিন আর্থিক খাতের শেয়ারের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। লেনদেন হওয়া ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪০টির। কমেছে দুটির।

এই খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এস আলম কোল্ডরোল স্টিলের দর। দিনের দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে শেষ করেছে লেনদেন। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৯.৯৩ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাম বেড়েছে অলেম্পিক এক্সসেসোরিজের ৯.৫৬ শতাংশ।

এ ছাড়া কে অ্যান্ড হকের ৮.২৭ শতাংশ, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের ৮.২০ শতাংশ, অ্যাপোলো ইস্পাতের দর বেড়েছে ৬.৩২ শতাংশ।

প্রকৌশলী খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা।

বস্ত্রে দাম বাড়লেও পিছিয়ে লেনদেনে

দুই দিনের দর সংশোধন শেষে আবার এই খাতের শেয়ার দেখা দিয়েছে প্রবল আগ্রহ। দাম বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের। তবে কমে গেছে লেনদেন।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে মোট ১৯৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা কিছু দিন আগেও ছিল চারশ কোটি টাকার বেশি।

এই খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বন্ধ থাকা তাল্লু স্পিনিং মিলসের দর। বেড়েছে বেশি ৯.৩৮ শতাংশ। মিথুন নিটিংয়ের দর বেড়েছে ৯.৩২ শতাংশ।

এছাড়া অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ৭.৮৯ শতাংশ, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭.৭৬ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইলের ৬.১৩, ম্যাকসন্স স্পিনিং এর ৪.৮১, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ৪.৭৬, মালেক স্পিনিং এর দাম বেড়েছে ৪.৩৪ শতাংশঅ।

সব মিলিয়ে এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির দর কমেছে, পাল্টায়নি দুটির। বাকি ৫১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।

অন্যান্য খাতের কী চিত্র

এ ছাড়া ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতে ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯টির। কমেছে একটির, আর দুটি ছিল অপরিবর্তিত। একটির লেনদেন বিএসইসির সিদ্ধান্তে স্থগিত আছে।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪টির। অপরিবর্তিত ছিল একটির। আর ৫টির দর কমেছে।

জ্বালানি খাতের ২২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টিরই। কমেছে তিনটির। আর অপরিবর্তিত ছিল একটির।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪টির। কমেছে ৬টির। আর একটির লেনদেন বিএসইসির সিদ্ধান্তে স্থগিত।

৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৯টির। কমেছে তিনটির। একটির লেনদেন দীর্ঘদিন ধরেই হচ্ছে না। আর বাকি ১৪টির দর ছিল অপরিবর্তিত।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০৭ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৫০ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৮ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৩২১ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৯৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৭৮ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর