বিনা প্রশ্নে ব্যাংকে নগদ জমা, নতুন শিল্পে বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট ও প্লট, ব্যাংক আমানতসহ বেশ কয়েকটি খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রেখে অর্থবিল ২০২১ পাস হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যবারের তুলনায় কর বেড়েছে।
এখন থেকে কালোটাকা সাদা করতে হলে কর দিতে হবে ২৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে করের ওপর জরিমানা গুনতে হবে ৫ শতাংশ।
তবে আগের মতো ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে নয়; ২৫ শতাংশ কর এবং ওই করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, সঞ্চয়পত্র কিনে টাকা সাদা করা যাবে।
একই হারে কর ও জরিমানা দিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে কালোটাকা সাদা হবে। জমি ও ফ্ল্যাট কিনে এলাকা ও আয়তনভেদে নির্ধারিত হারে কর দিলে সাদা হবে কালোটাকা।
জাতীয় সংসদে মঙ্গলবার প্রস্তাবিত অর্থবিলে জরিমানার শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বৈধ করার ‘বিশেষ সুযোগ’ দিয়ে সংশোধনী আনেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এই বিল পাস হয়।
অর্থবিল পাসের সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৩ জুন অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন, তাতে পুঁজিবাজারসহ এসব খাতে কালোটাকা হিসেবে অধিক পরিচিত ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ বিনা প্রশ্নে সাদা করার অবাধ সুযোগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
প্রস্তাবিত অর্থবিলেও তখন এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলে কালোটাকা সাদা করার বিশেষ সুযোগ শেষ হচ্ছে বলে আলোচনা তৈরি হয়।
তবে বাজেট প্রস্তাবের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রেখে তা বহাল রাখার ইঙ্গিত দেন।
শেষ পর্যন্ত প্রচলিত নিয়মের বাইরেও বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে করের হার বাড়িয়ে এবং তার সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ জরিমানা যোগ করে কোনো প্রশ্ন ছাড়া কালোটাকা সাদা করার ‘বিশেষ সুযোগ’ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন পেল।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজটে পুঁজিবাজারে কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ ছিল, তাতে ১০ শতাংশ কর দিতে হতো। তবে টাকা কোথা থেকে এসেছে, তার জবাব দিতে হতো।
নতুন বাজেটে কালোটাকা সাদা করার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগের পর তা এক বছরের মধ্যে তুলতে চাইলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।
এ ছাড়া ২৫ শতাংশ কর এবং করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংক ডিপোজিট, ফিন্যান্সিয়াল স্কিম ও ইনস্ট্রুমেন্ট, সব ধরনের ডিপোজিট ও সেভিংস ডিপোজিট, সেভিং ইনস্ট্রুমেন্ট অথবা সেভিং সার্টিফিকেট (সঞ্চয়পত্র) বৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা যাবে বলে অনুমোদিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে।
জায়গা অনুপাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর ও জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট প্রশ্নাতীতভাবে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে অর্থবিলে। পাশাপাশি ১০ শতাংশ কর দিয়ে নতুন শিল্পায়নে বিনিয়োগ করা যাবে অপ্রদর্শিত অর্থ।
সংসদে মঙ্গলবার কণ্ঠভোটে এই বিল পাস হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের দেয়া সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও ওয়াশিকা আয়েশা খানের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়।
নতুন অর্থবিলে নতুন এসব সুযোগের পাশাপাশি আগের ঘোষণা অনুযায়ী হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এবং জমি ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদার সুযোগ থাকছে।
এর বাইরেও আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘প্রযোজ্য হারে’ কর ও জরিমানা দিতে হবে এবং অর্থের উৎস জানাতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় দেয়া নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা ও এফডিআর, সঞ্চয়পত্র কিনে ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ৩০ জুন, অর্থাৎ বুধবার শেষ হয়ে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারেও একই হারে কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ শেষ হচ্ছে ৩০ জুন।
ফলে কম হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে আর মাত্র এক দিন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এক বছর ধরে নগদ টাকা বেশি সাদা হয়েছে। নগদ টাকা সাদা করায় বেশি আগ্রহ ছিল করদাতাদের।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩৪ জন করদাতা কালোটাকা সাদা করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ তেমন একটা নেননি করদাতারা। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৩৪১ জন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে এ সুযোগ নিয়েছেন। জমি কিনেও খুব একটা কালোটাকা সাদা হয়নি।