মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) পরিমাণ ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে এই তহবিলের আকার বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান।
মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর এই কঠিন পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ায় ইডিএফের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।’
গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর ৭ এপ্রিল রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের পরিমাণ সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়। সেই সঙ্গে রপ্তানিকারকদের জন্যে এই তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশে বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তার আগে ইডিএফ থেকে কোনো রপ্তানিকারক ঋণ নিলে লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অপার রেট) এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হতো। সেক্ষেত্রে লাইবর রেট প্রতিদিনই ওঠানামা করায় সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মতো পড়ে যেতো।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়াতে ইডিএফ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর পর চলতি বছরের ২৮ মার্চ রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার করা হয়। সুদের হার ১ দশমিক ৭৫ শতাংশই বহাল আছে।
স্বাধীনতার পর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ইডিএফ গঠন করা হয়। দেশের রপ্তানি আয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই তহবিলের আকারও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্যান্য রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্যরা ইডিএফ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন।
ছাইদুর রহমান বলেন, ‘বিজিএমইএ ও বিটিএমএ সদস্যদের ইডিএফ থেকে ঋণ দিতে চাহিদা বেশি। সে কারণে তাদের ঋণের সীমাও বেশি; এই দুই সংগঠনের একজন সদস্য এই তহবিল থেকে তিন কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন।’
গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই ওলট-পালট এখন কোভিড-১৯ মহামারিতে। তার ধাক্কায় উল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশও। রপ্তানি আয়সহ অন্যান্য খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, মহামারির মধ্যেও ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
মহামারির এই কঠিন সময়ে ইডিএফ তহবিল বাড়ানোয় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারিসহ নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও আমরা পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি। ইডিএফ ৬ বিলিয়ন ডলার হওয়ায় এই তহবিল থেকে এখন আরও বেশি ঋণ পাবেন উদ্যোক্তারা। যাতে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’