বাংলাদেশের উন্নয়ন রূপকথার গল্পগাঁথাকেও হার মানায় বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট অধিবেশনে নিজের দেয়া বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী উন্নয়নের নির্দেশক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারের গত ১২ বছরের অনন্য অর্জনগুলো রূপকথার গল্পগাঁথাকেও হার মানায়। এই সময়ে আমাদের মাথাপিছু আয় ৬৮৬ ডলার থেকে ৩ গুণের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলারে। জিডিপির আকার ৯১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় ৪ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৫ বিলিয়ন ডলারে। রপ্তানির পরিমাণ ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন থেকে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন হতে সাড়ে ৭ গুণ বেড়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই করছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এত বেশি পরিমাণ রিজার্ভ নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড। তারপর প্রবাসী আয় ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁইছুঁই করছে। মাত্র ১ বছরে প্রবাসী আয় খাতে ২৫ বিলিয়ন ডলার অর্জন নিঃসন্দেহে আরও একটি অনন্য ঐতিহাসিক রেকর্ড।’
মুস্তফা কামাল জানান, সারা বিশ্বই করোনার কারণে ঘাটতি বাজেট প্রণয়নের পথ বেছে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এ বছর বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ করেছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে ঘাটতি বাজেটের হার ৪১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারা বিশ্ব আজ একটি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিধারা। পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। উন্নত বিশ্ব কিংবা উন্নয়নশীল- কেউই নিস্তার পায়নি। বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি আজ বিয়োগাত্মক।’
‘তবে, আমরা সৌভাগ্যবান, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের অর্থনীতি কখনও বিয়োগাত্মক অবস্থায় পড়েনি।’
‘সঙ্গত কারণেই পাকিস্তানের প্রসঙ্গ এসে যায়। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশ্ব ব্যাংকের পাকিস্তান প্রোগ্রামের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান। ‘এইড ফ্রম বাংলাদেশ’ নামের এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ। তার মতে এভাবে বাংলাদেশ এগোতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সংকটকালে আমাদের বাজেটে গতবছরের মত এবারেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে দেশের প্রান্তিক তথা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কাউকে পেছনে না রেখে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে আগামীর পথে দূর, বহুদূর, বহুদূর---নিরন্তর। জাতির পিতার তুলিতে আঁকা স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ হবে।’
‘মানবতার জয় হোক। জয় হোক সভ্যতার।’