বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদীতীর সংরক্ষণেও বিদেশ সফরের প্রস্তাব

  •    
  • ২৯ জুন, ২০২১ ০৮:৩৮

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাউবো নদীতীর সংরক্ষণ ও নদী খননের প্রায় দুই ডজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই তাদের পুরোনো একটি প্রকল্পের নতুন মেয়াদের জন্য অভিজ্ঞতা নিতে বিদেশ সফর হাস্যকর।

প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প চলেছে পাঁচ বছর। একই ধরনের আরও প্রকল্প চলমান। আগেও প্রচুর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারপরও নদীর তীর সংরক্ষণের অভিজ্ঞতা বাড়াতে বিদেশ সফরের জন্য পৌনে ৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নতুন একটি প্রকল্পে।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাউবো নদীতীর সংরক্ষণ ও নদী খননের প্রায় দুই ডজন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই তাদের পুরোনো একটি প্রকল্পের নতুন মেয়াদের জন্য অভিজ্ঞতা নিতে বিদেশ সফর হাস্যকর।

পাউবো বলছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় সোয়া দুই হাজার হেক্টর এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ে। এর বড় অংশ রয়েছে প্রধান দুই নদী পদ্মা ও যমুনার দুই তীরে। খরস্রোতা ও ভাঙনপ্রবণ এই দুই নদীর তীর সংরক্ষণে চলমান কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আগামী জুলাই মাসে।

গত এক দশকে নানা কার্যক্রমে ভাঙনের হার তিন ভাগে নেমেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ের আবারও প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

তবে পাউবোর এ চাওয়ায় বাদ সেধেছে পরিকল্পনা কমিশন। পাউবোর পাঠানো প্রস্তাব দেখে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফরে আপত্তি তুলেছে তারা। তা ছাড়া প্রকল্পের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে ৫ কোটি টাকা চাওয়া নিয়েও তোলা হয়েছে প্রশ্ন। এ ছাড়া দেশের মধ্যে প্রশিক্ষণে বিশাল ব্যয়, নদীতীর সংরক্ষণে বাড়তি ব্যয়, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গাড়িসহ নানা বিষয়ে আপত্তি তুলেছে কমিশন।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বেশ কিছু খাতের ব্যয়ে কাটছাঁট করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, পিইসির সভায় ‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম-২’ শীর্ষক এ প্রকল্পের পৌনে দুই হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে বিদেশ সফরসহ বেশ কিছু খাতের ব্যয় বাতিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, করোনাকালীন সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে বিদেশ সফরে নিরুৎসাহ দেয়া হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এমনকি প্রকল্পে বা সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার বিষয়েও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে।

করোনা মহামারির মধ্যে বেশির ভাগ প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়টি বাতিল করে পরিকল্পনা কমিশন। এ ক্ষেত্রে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলোতেও বিদেশ সফর প্রায় শতভাগ বাদ দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়গুলো থেকে তবুও কোনো না কোনো অজুহাতে বিদেশ সফরের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব আসছে।

এর আগে পুকুর খননে বিদেশ সফর, খাল খননে বিদেশ সফর, নদী খননে বিদেশ সফরের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে আপত্তি ও সমালোচনার মুখে সেসব প্রকল্পে বিদেশ সফর বাদ দেয়া হয়।

সম্প্রতি স্কুল ফিড প্রকল্পেও (খিচুড়ি রান্না) বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা হলে বিদেশ সফর বাদ দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাম্প্রতিক সভায় প্রকল্পটিই বাতিল করা হয়।

নদীর তীর সংরক্ষণের প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফর বা বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। একই ধরনের কাজ দেশে প্রচুর হলেও স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদও এ প্রকল্পে ১ কোটি ২ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। চারটি জিপ (এসইউভি) ও চারটি পিকআপ কিনতেও ৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণ একটা প্রবণতা রয়েছে যে প্রকল্পে বিদেশ সফর থাকতেই হবে। দেখা যায়, ধান কী করে লাগাতে হয়, তার জন্য বিদেশ সফর, পুকুর খননের জন্য বিদেশ সফর করতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব এটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা, এসব অপ্রয়োজনীয় খাত বাদ দেয়া।

‘অনেক সময় দেখা যায়, লাইন মিনিস্ট্রি প্রকল্পের মূল কাজ বাদ দিয়ে শুধু গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। এমনকি ডোনারদেরও বলা হয়, এগুলো রাখতে হবে; না হলে প্রকল্প নেবই না। সব প্রকল্পে তারা এগুলো রাখবেই।’

পাউবোর প্রকল্পটির প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ব্যয় বাবদ ৬১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এতে প্রতি মিটারে ব্যয় ২ লাখ টাকারও বেশি।

৭ দশমিক ৯০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা (মিটার ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা) এবং ৩ কিলোমিটার বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বা মিটারপ্রতি ২৮ হাজার ৪৩৪ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় দুটি জলস্রোত নিয়ন্ত্রণের জন্য স্লুইসগেট নির্মাণ বাবদ ২২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১২টি মৎস্য অভয়াশ্রম উন্নয়ন বাবদ ১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও সাতটি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ছাউনি নির্মাণ বাবদ ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এসব ব্যয়ের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে পিইসির সভায় বলা হয়, যেহেতু একই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ও প্রায় শেষ, তা ছাড়া একই ধরনের অনেক প্রকল্প দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে কয়েকটি, তাই নতুন করে বিদেশ প্রশিক্ষণ অযৌক্তিক। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রায় ৬ কোটি টাকা বাদ দিতে হবে। দেশি প্রশিক্ষণের ব্যয়ও কমিয়ে অর্ধেকের নিচে নামাতে হবে। আবার গাড়ি কেনা, সরঞ্জাম কেনা, মাছের অভয়াশ্রম করাসহ অন্যান্য যেসব খাতে বেশি ব্যয় বলে মনে হচ্ছে, তাও যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ যে নদীর তীরে ভাঙন বেশি, তাতে অনেক গভীর থেকে প্রথমে জিও ব্যাগ ফেলে তার ওপর সিমেন্টের ব্লক ফেলতে হয়। ফলে খরচ বেশি হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে কাজ অনেক কম। ভাঙনের হার বেশি না। ফলে প্রতি মিটার তীর নদী সংরক্ষণের ২ লাখ ৫ হাজার টাকা ব্যয়ের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নেই।

‘তা ছাড়া নদী সংরক্ষণ কাজের পর কী কী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে, তাও উল্লেখ করা হয়নি প্রস্তাবে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের ব্যয় নিয়েও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাতে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে এসব খাতে ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সভায় বিদেশ সফর সম্পূর্ণ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চারটির পরিবর্তে একটি জিপগাড়ি কেনার জন্য বলা হয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি সমীক্ষা করলেও একটি নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে এ প্রকল্পের সমীক্ষা করা প্রয়োজন। এতে প্রকৃত ব্যয় সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।’

গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক ও নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘নদীর ধরন অনুসারে তীর সংরক্ষণের ব্যয় কম-বেশি হতে পারে। গভীর, খরস্রোতা ও অধিক ভাঙনপ্রবণ নদীতে তীর সংরক্ষণে ব্যয় বেশি হতে পারে।

‘আবার অন্য শাখা বা ছোট নদীতে কম হতেও পারে। তবে দেখতে হবে যমুনা ও পদ্মার কোন অংশ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। ভাঙনের প্রবণতা কম হলেও ব্যয় প্রাক্কলনের চেয়ে কমও হতে পারে।’

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর তীরবর্তী ভাঙন সবচেয়ে বেশি হয়। এ জন্য নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রকল্পটি নেয়া হচ্ছে। এতে প্রস্তাবিত ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

অনুদান হিসেবে ১০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেবে নেদারল্যান্ডস সরকার। সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে থাকবে ৩১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগামী চার বছরে রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের চার জেলার নয় উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এর আগে ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম পর্যায়ের ‘ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরোশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট’ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ দিকে। নতুন প্রকল্প এলাকার মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা শাহজাদপুর, বেলকুচি ও চৌহালী।

টাঙ্গাইল জেলার দুই উপজেলা হলো টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুর। মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা হলো দৌলতপুর, হরিরামপুর ও শিবালয়। এ ছাড়া পাবনা জেলার বেড়া উপজেলা রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর