রন হক সিকদার নন, খেলাপি ঋণ থাকায় ন্যাশনাল ব্যাংক বা এনবিএলের পরিচালকের পদ হারিয়েছেন তার ভাই রিক হক সিকদার।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ব্যাংকটির প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের ছেলে রন বাদ পড়েছেন ব্যাংকটির পরিচালকের পদ থেকে।
তবে রাতে তিনি ফোন করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রন নন, এনবিএলের পরিচালকের পদ থেকে বাদ পড়েছেন রিক হক সিকদার।’
বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্সের বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল প্রায় এক দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করছে সিকদার পরিবার। চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তিনি মারা যান। এরপর ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার।
এই দম্পতির সন্তান পারভীন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে এখন একটি পদ শূন্য হলো।
তবে রিকের খেলাপি ঋণ কত, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে দুই জন পরিচালকের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। রিক হক সিকদারের বিষয়ে সিআইবি থেকে ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। এ কারণে পরিচালক পদে তার মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।
বিষয়টি সুরাহার জন্য রিক হক সিকদারের ভাই ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া ও সিকদার গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সৈয়দ কামরুল ইসলাম (মোহন)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, রন হক সিকদারকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, ঋণ নিয়মিত হলেই রিক হক সিকদার পরিচালক পদ ফিরে পাবেন। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করত হবে।
২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ন্যাশনাল ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় রিক হক সিকদার পদত্যাগ করে নতুন পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন। তবে নতুন করে পরিচালক পদে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন নেয়ার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংককে তাগাদা দেয়। ব্যাংকটি রিক হক সিকদারকে পরিচালক করার প্রস্তাব পাঠালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ঋণের মান যাচাই করে। এতে বেরিয়ে আসে যে রিক হক সিকদার ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন।
মূলত একটি কোম্পানি ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিচালক রিক হক সিকদার।
এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দেয়, রিক হক সিকদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি থাকায় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালক পদে অনুমোদন দেয়ার সুযোগ নেই।
যে কারণে আলোচিত রন হক শিকদার
প্রায় এক দশক ধরে ন্যাশনাল ব্যাংক পরিচালনা করছে সিকদার পরিবার। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন জয়নুল হক সিকদার। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে তিনি মারা যান। এরপর ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার।
ব্যাংকটির পরিচালক পদে আছেন এ দম্পতির সন্তান পারভীন হক সিকদার, রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার।
রিক হকের পরিচালক পদ হারানোর খবরে তার পক্ষে রন শিকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেখা করতে গেলে আবার আলোচনায় আসেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা মনে করেন, রন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পদ হারিয়েছেন। এ জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন।
গণমাধ্যমেও ‘রন শিকদার পরিচালক পদ হারিয়েছেন’ এমন খবর প্রচারিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রন নন, পরিচালক পদ হারিয়েছেন রিক শিকদার।
রন সিকদার একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। ২০২০ সালের ১৯ মে রন ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের এই মামলা করে এক্সিম ব্যাংক।
এতে রন ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি ঘরে বন্দি করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। পরে সাদা কাগজে সই নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে মামলা করার আগেই দুই ভাই দেশের বাইরে চলে যান। পলাতক অবস্থায় তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে বিচারক ভর্ৎসনাও করেন তার আইনজীবীদের।
দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হওয়ার পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়ে পরদিন বাবার জানাজায় অংশ নেন রন।
পরে গত ১০ মার্চ জামিনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়ানো হয়। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ১১ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে তাকে স্থায়ী জামিন দেয়া হয়।