দেশের বিভিন্ন খাতে আরও গবেষণার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে গবেষণার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা দূর করার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির উদ্যোগে ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২: করোনাকালীন টেকসই উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। সমিতির সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির মহাসচিব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল। যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. ইসমত আরা বেগম ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে আরও বেশি গবেষণা করতে হবে। তবে গবেষণার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ও বরাদ্ধকৃত বিনিয়োগ গবেষকরা খরচ করতে পারে না। এটা দূর করতে হবে। সরকারের এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থনীতিতে বৈষম্য ও মুদ্রাস্ফীতি আগের চেয়ে কম। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অনেকটা স্থির। নতুন বাজেট ব্যবসা বান্ধব, বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। এটাকে জনবান্ধবও করা হয়েছে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ঘাটতি বাজেটের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির তেমন আশংকা নেই। কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকের তা নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে কৃষিখাতের গুরুত্ব অনেক। কৃষিতে তরুণ শিক্ষিত উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। গবাদিপশু, হাওর ও উপকূলীয় কৃষিতে বীমা চালু করা আবশ্যক বলে মত দেন তিনি।
ড. আতিউর আরও বলেন, এবারের বাজেট সরাসরি ৭০ শতাংশ গরিবকে লক্ষ্য করে প্রণীত হয়েছে। তাছাড়া ১১২টি খাতে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ নতুন করে সেবা পাবেন।
মুখ্য আলোচক ড. শামসুল আলম বলেন, নতুন বাজেট ব্যবসাবান্ধব। বর্তমান অর্থনীতিতে ৭০-৮০ শতাংশ আয় আসে বেসরকারি খাত হতে। সুতরাং অর্থনীতি এগিয়ে নিতে এমন উদ্যোগই গ্রহণ করা জরুরি।
গত এক দশককে সংস্কারের দশক উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু জায়গায় সংস্কারের প্রয়োজন। বর্তমানে মাথাপিছু আয় বাড়লেও কর আদায় আশানুরূপ নয়। এ বাজেটে কর কমিয়ে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে, তবে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর জন্য এনবিআরের সংস্কার প্রয়োজন। এ কোভিডকালেও গত প্রায় দুই অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কৃষিজ উৎপাদন বেড়েছে এবং শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
তিনি বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি ও রূপকল্প ২০২১-৪১ এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা এবং ক্রমান্বয়ে শূন্য দারিদ্র্য লক্ষ্য অর্জন। এবারের বাজেট সরাসরি ৭০ শতাংশ গরীবকে লক্ষ্য করে প্রণীত হয়েছে। তাছাড়া ১১২টি খাতে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় প্রায় ৮ লাখ মানুষ নতুন করে সেবা পাবেন।’
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদুল হাসান প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে দেশের অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ বা বিপণনের সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে গ্রাজুয়েটদের কৃষি বিপণন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যায় অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।