বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন বা শাটডাউনের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের শর্তেই এই ছাড় দিয়েছে সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে শনিবার রাতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভার পর গভীর রাতে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান পোশাকশিল্পের মালিকদের উদ্দেশে একটি বিশেষ বার্তা দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আমাদের কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সবাই কলকারখানা খোলা রাখবেন। এটা আমার বিশেষ অনুরোধ।’
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর পক্ষ থেকেও কারখানার মালিকদের একই ধরনের বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
বিশেষ বার্তায় বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক বলেন, লকডাউন চলাকালে কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সর্বাত্মক লকডাউনেও শিল্প খাতগুলো খোলা থাকবে এবং শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক, পোর্ট, কাস্টমস কার্যক্রম লকডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
বিজিএমইএর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করে সবাই যেন সরকারকে সহযোগিতা করেন এবং সর্বাত্মকভাবে কঠোর লকডাউন পালন করেন।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার এবং বিজিএমইএ থেকে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সবাই যেন কলকারখানা চালান, এই অনুরোধ করেন বিজিএমইএর সভাপতি।
বিষয়টি নিয়ে রোববার দুপুরে ফারুক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশেষ অনুরোধে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সরকার পোশাক কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি একেবারে পুরোপুরি মানতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা সেটা মেনেই কারখানা চালাব। সেই বার্তা আমি শনিবার রাতেই সব মালিককে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সব কারখানা মনিটর করা হবে। যারা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানবে না, তাদের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে।
ফারুক বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি পোশাক কারখানা যদি বন্ধ করা হয়, তাহলে গার্মেন্টস কর্মীরা তখন গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। এটা সবাই জানে, ছুটি পেলেই শ্রমিকরা গ্রামের দিকে রওনা দেন। এতে করোনার প্রকোপ আরও ছড়িয়ে পড়বে। গ্রাম-শহর একাকার হয়ে যাবে।
‘কারখানা বন্ধ রাখা যতটা না উপকার, তার চেয়ে খোলা রাখাই বেশি উপকার। বন্ধ হলে অর্ডার বাতিল হবে, বায়াররা (বিদেশি ক্রেতা) চলে যাবে। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ কমে যাবে।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘ঈদের আগে এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। তাই সার্বিক বিবেচনায় কারখানা খোলা রাখাই উত্তম হবে বলে আমি মনে করি।’
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও এমন নির্দেশ সব মালিককে দেয়া হয়েছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে দেশজুড়ে শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার নয়, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে কঠোর শাটডাউন।
সরকার কঠোর লকডাউন বললেও এবারের বিধিনিষেধ পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ হিসেবে।
এ সময়ে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন এবং জরুরি পণ্যবাহী বাহন ছাড়া বন্ধ থাকবে সব ধরনের যান চলাচল।
রাজধানী ঢাকায় রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলবে না বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।