সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশ আবার কঠোর বিধিনিষেধে গেলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক বা এনবিএলের লভ্যাংশ সংক্রান্ত বোর্ডসভা পেছাবে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানি সচিব।
তিনি জানান, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে ৩০ জুন লভ্যাংশ বিষয়ক যে সভা হওয়ার কথা আছে, সেটি হবেই।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও চলতি বছরের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও আসেনি এনবিএলের সিদ্ধান্ত।
অর্থবছর শেষ হওয়ার ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করতে হলেও গত দুই বছর ধরে পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর ২৬ মে থেকে ৬৬ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন স্থগিত ছিল। তবে চলতি বছর এখনও লেনদেন স্থগিত হয়নি।
তবে এবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কোম্পানিকে বোর্ড সভা করতে বাড়তি ৩০ কর্মদিবস সময় দিয়েছে। আগামী ৩০ জুন এই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। আর শেষ দিনই সভা করার কথা জানিয়েছে এনবিএল।
এই ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটির শেয়ার সংখ্যা ৩০০ কোটিরও বেশি। আর এই বিপুল সংখ্যক শেয়ারের মালিকরা সেই সভার দিকে যখন তাকিয়ে, তখন সরকার ২৮ জুন থেকে সারাদেশে আবার কঠোর লকডাউন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যেটি এবার পরিচিতি পেয়েছে শাটডাউন নামে।
এই অবস্থায় এনবিএল বোর্ড সভা করবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হতে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব কাইসার রাশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘৩০ জুন বোর্ড সভার যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে সেটির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ৩০ জুনই বোর্ড সভা হবেই।’
যদি ব্যাংক এবার বন্ধ থাকে তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবস্থা বুঝে অনলাইনেও বোর্ড সভা করা যেতে পারে।’
করোনাকালে কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভা অনেকগুলোই অনলাইনে হয়েছে। আর বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে যে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম হয়েছে, তার সবগুলোই হয়েছে অনলাইনে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগের পরিচালন মুনাফাই আগের বছরের তুলনায় কমে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এনবিএল। এই কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
আবার চূড়ান্ত হিসাবের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এবার পরিচালন মুনাফা কম হলেও চূড়ান্ত মুনাফা বেশি হয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই। এখন এনবিএলের ক্ষেত্রে কী হয়েছে, সেটি আগেভাগে প্রকাশ করায় আইনি বাধা আছে। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের পরেই সেটি প্রকাশ করা হবে।
তৃতীয় প্রান্তিকের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪৭ পয়সা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় অবশ্য কম। সে সময় তিন প্রান্তিক মিলিয়ে আয় ছিল ৬৭ পয়সা।
৩১ ডিসেম্বরের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যাংকটি গত বছর পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৮০ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৯৫০ কোটি টাকা।
তবে এই মুনাফা থেকে ঋণের সঞ্চিতি সংরক্ষণ আর ৪০ শতাংশ কর পরিশোধের পর চূড়ান্ত মুনাফার ঘোষণা আসবে। কত টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে, সে বিষয়ে আগেভাগে কোনো তথ্য কোনো প্রতিষ্ঠানই দেয় না।
২০১৯ সালে এনবিএল শেষ পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪১ পয়সা আয় করে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৫০ পয়সা দেখা হয় নগদে, আর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পেয়েছেন প্রতি ২০টিতে আরও একটি।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে পুরোনো ও বড় ব্যাংকগুলোর একটি হলেও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার মূল্য একেবারেই তলানিতে। প্রতিবছর লভ্যাংশ ঘোষণা করে, এমন কোম্পানির মধ্যে এত কম দামে আর কোনো শেয়ার বিক্রি হয় না।
বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৮ টাকা ২০ পয়সা করে। অর্থাৎ অভিহিত মূল্য ১০ টাকার চেয়ে ২১ শতাংশ কমে আছে দাম।