‘দুর্নীতি কেউ চায় না। তবু দুর্নীতি বিরাজমান’- এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দুর্নীতি রোধে অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরলেন।
তিনি বলেন, ‘এটাকে (দুর্নীতি) আক্রমণ করার অস্ত্র আপাতত নেই। সরকার চেষ্টা করছে। যেমন, ব্যবসা করতে এত লাইসেন্স লাগে। এটা কমাতে হবে। আইনকানুন বানাতে হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেট ও বেসরকারি খাত নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) আয়োজিত এক বাজেট আলোচনায় শনিবার এ কথা বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি বাস্তবায়নে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনুভব করি ঘাটতি আছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আমি যখন চাকরি শুরু করি, তখন যে অবস্থায় ছিল, এর চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সাগর পরিবর্তন করতে পারিনি, কিন্তু পুকুর পরিবর্তন করতে পেরেছি।’
সেমিনারের বেশিরভাগ বক্তা গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের কীভাবে প্রণোদনার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে নানা পরামর্শ দেন।
তারা বলেন, সরকারের সব প্রণোদনা ও ঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে। আবার গ্রামের উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশের ব্যাংক সুবিধার বাইরে। এ জন্য তারা কোনো প্রণোদনাই পায়নি।
এদের হাতে প্রণোদনার অর্থ পৌঁছাতে হলে বিকল্প উপায় চিন্তা করার পরামর্শ উঠে এসেছে ওয়েবিনারে। আর এ ক্ষেত্রে এনজিও বা ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার কথাও বলেন কেউ কেউ।
তারা বলেন, মফস্বল ও গ্রামের মানুষ অনেক অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যবসা করে। কিন্তু এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের অর্থায়ন কীভাবে করতে হবে সে কৌশল বাজেটে নেই।
এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রণোদনার ঋণ এনজিওগুলোর মাধ্যমে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের সুদহার অনেক বেশি। এজন্য পিকেএসএফ, এসএমই ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার চেষ্টা চলছে।'
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, করোনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সরকারঘোষিত প্রণোদনা কীভাবে দ্রুত পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। পুঁজি হারিয়ে যাদের ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা কীভাবে ব্যবসায় ফিরবে জানা নেই।
বাজেটে থোক বরাদ্দ হিসেবে সাত হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এখন আবার লকডাউন দেয়া হচ্ছে। এই টাকা গরিবদের জন্য খরচ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
করোনার মধ্যেও আর্থিক খাতে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার কর কমানো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লভ্যাংশের ওপর কর দেয়ার প্রস্তাব বাতিলের পরামর্শও দেয়া হয় মূল প্রবন্ধে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়লেই তা অর্থনীতির জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে। আমরা হয়তো শ্রীলঙ্কা ও সুদানকে ঋণ দিয়ে বাহবা নিতে পারব। এই অর্থ বসিয়ে না রেখে অর্থনীতিতে কাজে লাগানো উচিত। রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার নিয়ে পরিকল্পনা দরকার।’
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে আমরা। কিন্তু কোভিড প্রেক্ষাপটে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। টিকা কার্যক্রম চমৎভাবে শুরু হলেও এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নতুন নুতন ঢেউ আসতেই থাকবে । এজন্য ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, বারবার লকডা্উনে বেসরকারি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইআইএসএস এর গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির বলেন, ‘করোনায় যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের বিষয়ে তেমন আলোচনা নেই।’
আয়োজক সংগঠন আইবিএফবির সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী বলেন, ‘বাজেটে কোনো কোনো খাতে ৮ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রিম কর দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে ওই খাতকে বছর শেষে ৩৫ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। তা না হলে ওই অগ্রিম কর ফেরত পাওয়া মুশকিল।’