করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে সারা দেশে সাত দিনের শাটডাউন ঘোষণার কোনো প্রভাব পড়েনি ভোগ্যপণ্যের দেশের অন্যতম বড় বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণেই আছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের অন্যতম আড়তদার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ঈদুল আজহার আগে পেঁয়াজের অতিরিক্ত চাহিদা আছে। কঠোর শাটডাউন ঘোষণার পরেও খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ আছে। এখানে বেচাকেনা এবং সরবরাহ সবকিছুই স্বাভাবিক।’
খাতুনগঞ্জে শনিবার ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও একই ছিল। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায়। সেটিরও দাম বাড়েনি।
খাতুনগঞ্জ থেকে পণ্যবোঝাই যানবাহন অন্যান্য দিনের মতোই ছুটছে বিভিন্ন স্থানে। ভোগ্যপণ্যের কেনাবেচা ও সরবরাহ স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিভিন্ন ট্রাকে পণ্য লোড-আনলোড হচ্ছে। শ্রমিকরাও প্রতিদিনকার মতো ব্যস্ত।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের মালিক সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের পরিবহন এবং বেচাকেনা শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এ জন্য খাতুনগঞ্জ স্বাভাবিক।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহম্মদ জানান, ঈদ আসছে বলে অন্য সময়ের তুলনায় পাইকারি মোকামে এখন পণ্য বিক্রির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এর মধ্যে এসেছে শাটডাউনের ঘোষণা। কিছু মানুষ এতে আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত পণ্য কিনেছেন। এর কোনো প্রয়োজন নেই। পর্যাপ্ত পণ্য আছে দেশে। যেকোনো সময় চাহিদামতো পণ্য কিনতে পারবে মানুষ।
খাতুনগঞ্জ থেকে নিয়মিত পণ্য কেনেন সন্দ্বীপের ব্যবসায়ী নুর মাঝি। তিনি বলেন, কোনো কিছুর দাম বাড়েনি। তবে ক্রেতা বেড়েছে। কেনাবেচাও বেশি।
তবে লোকসানের আশঙ্কার কথা বলছেন খাতুনগঞ্জের মসলা বাজারের ব্যবসায়ীরা।
হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘কুরবানির আগে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জ এসে মসলা পণ্য কিনে নিয়ে যান। প্রতিবছর এই সময়টাতে মসলার বাজার জমজমাট হয়। কিন্তু শাটডাউন ঘোষণার কারণে এবার হয়তো ব্যবসা হবে না। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়বেন।’
দেশে ভোগ্যপণ্য বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। চট্টগ্রাম জেলার পাশাপাশি এই মোকাম থেকে পণ্য যায় পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারে। পাশাপাশি পাইকারি দামে এখান থেকে পণ্য কেনেন নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের বাদশা মার্কেট, ইলিয়াছ মার্কেট, চান্দমিয়া গলি, হামিদুল্লাহ মার্কেট, সোনামিয়া মার্কেট, নবী মার্কেটে থাকা পাইকারি মোকাম থেকে নৌপথেও পণ্য যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এসব কারণে খাতুনগঞ্জ স্বাভাবিক থাকা দেশের ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য জরুরি বলে মনে করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।