কঠোর লকডাউন বা শাটডাউনের মধ্যে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখতে চান দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। তবে দেশের স্বার্থে সরকার কারখানা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলে অবশ্যই বন্ধ রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার রাতে নিউজবাংলাকে এমন তথ্য জানিয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো খোলা রেখে উৎপাদন হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই আমরা চালাতে চাই। তবে সরকার যদি বন্ধ রাখতে বলে অবশ্যই বন্ধ রাখব। দেশের এই সঙ্কটের সময়ে আমরা সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।’
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই তো কিছুদিন আগে রোজার ঈদের ছুটিতে সপ্তাহ খানেক সব কারখানা বন্ধ ছিল। এরপর এখন যদি আবার বন্ধ থাকে তাহলে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। এরপরও সরকার যা বলবে সেটাই আমরা পালন করব।’
পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই খুব কঠিন সময় পার করছি আমরা। বায়াররা ঠিকমতো পণ্যের মূল্য পরিশোধ করছে না। দাম কমিয়ে দিয়েছে অনেকে। আমরা সবাই আর্থিক সঙ্কটে আছি। পোশাক রপ্তানি থেকে যে টাকা পাই তা দিয়েই শ্রমিকদের বেতনসহ অন্য সব খরচ করি।
‘কারখানা বন্ধ থাকলে রপ্তানি হবে না। টাকা পাব না। সামনে ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেব কী করে? আমাদের সঙ্কট আরও বাড়বে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিধিনিষেধের পাশাপাশি আরও কঠোর অবস্থানে গেছে সরকার। সোমবার থেকে সাত দিনের জন্য সকল অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
লকডাউনে বন্ধ গণপরিবহন। হেঁটেই গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা মানুষের। ছবি: নিউজবাংলা
এটিকে সরকার কঠোর লকডাউন বললেও পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ হিসেবে।
সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার রাত পৌনে ৯টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন পালন করা হবে। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন এবং জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন চলাচল।
সাধারণ মানুষের চলাচলেও আরোপ করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না কেউই। তবে গণমাধ্যমকে কঠোর লকডাউনের বাইরে রাখা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনিবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত থাকবে।
করোনাভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।