বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওটিসি থেকে ফিরেই ধামাকা, পরে হতাশা

  •    
  • ২৫ জুন, ২০২১ ১৭:২০

ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরা ইউসিবি ব্যাংক, সোনালী পেপার, এর আগে ফেরা ওয়াটা ক্যামিকেল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারও এভাবে লাফাতে লাফাতে বেড়েছে। পরে শেয়ার দর কমে হতাশায় ফেলেছে বিনিয়োগকারীদের। এবার নতুন করে ফেরা চারটি কোম্পানির দামও একইভাবে লাফাচ্ছে। টানা ১০ দিন দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ বা আশেপাশে। তবে একটি কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলোর

২০০৯ সালে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি থেকে ফেরার পর ইউসিবিএল টানা ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শেয়ার দর এক পর্যায়ে ছাড়ায় সাড়ে তিন হাজার টাকা।

সে সময় শেয়ারের ফেসভ্যালু ছিল ১০০ টাকা। এখন ১০ টাকা। এই হিসাবেও দাম ছাড়ায় ৩৫০ টাকা।

তখন ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল কম, শেয়ার সংখ্যা ছিল সীমিত। পরে বোনাস শেয়ার নিয়ে শেয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।

তবে সেই হিসাব ধরলেও এখন শেয়ার দর ৮ ভাগের এক ভাগ মাত্র।

বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির শেয়ার দর ছিল ১৬ টাকা ৮০ পয়সা। ২০০৯ সালের পর থেকে বোনাস শেয়ার বিবেচনায় আনলে দাম হয় ৪৫ টাকা মাত্র।

এই এক দশকে ব্যাংকের শেয়ার দরে ধস নেমেছে-এটা ঠিক। তবে অন্য যেসব কোম্পানি ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে এসেছে, তার সবগুলোর দশাই কম বেশি একই রকম।

মূল মার্কেটে আসার পর ধাই ধাই করে বাড়তে থাকে দাম। পরে দাম কমে যায়। আর উচ্চমূল্যে যারা শেয়ার কেনেন তারা কেউ লোকসান না দিয়ে হতে পারেন না।

সম্প্রতি চারটি কোম্পানি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে আসার পর একই ঘটনা ঘটছে।

গত ১৩ জুন মুন্নু ফেব্রিক্স, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনস্পুল পেপার ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ার দর প্রতিদিনই লাফাচ্ছে। প্রতিদিনই দাম আগের দিনের তুলনায় ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি বেড়েছে। কিন্তু একটি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ারধারীরা পর পর ১০ কার্যদিবস এভাবে সর্বোচ্চ দাম বাড়ার পরও বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না।

এরই মধ্যে শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ও শেয়ার প্রতি আয়ের বিবেচনায় এসব কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত বছর মূল মার্কেটে ফেরা সোনালী পেপার, এর আগে ফেরা ওয়াটা ক্যামিকেল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারও এভাবে লাফাতে লাফাতে বেড়েছে। পরে শেয়ার দর কমে হতাশায় ফেলেছে বিনিয়োগকারীদের।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা বিনিয়োগকারীদের পুরনো অভ্যাস। তারা মনে করে নতুন শেয়ার কিনলেই লাভ হবে। কিন্ত বাস্তবে তা ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘ওটিসি থেকে যে কোম্পানিগুলো এসেছে সেগুলোর আয় কত তা দেখা উচিত। এর আগেও আগেও যেসব দুর্বল কোম্পানি ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে এসেছে বিনিয়োগকারীরা সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’

দেবব্রত বলেন, ‘কোম্পানিগুলো দুর্বল বলেই এতদিন ওটিসিতে ছিল। এখন মূল মার্কেটে আসলেই যে সেটি একদিনে ভালো হয়ে যাবে তা ভাবাও ঠিক না।’

আগের অভিজ্ঞতা

ওয়াটা কেমিক্যালস

২০১৪ সালে ওটিসি থেকে মূল বাজারে আসা ওয়াটা কেমিক্যালস লিমিটেড।

মূল মার্কেটে আসার আগে শেয়ার মূল্য ছিল ৫০ টাকার আশেপাশে। মার্কেটে আসার পর ১২ কর্মদিবসে লেনদেন হয় কেবল দুই দিন। পরে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ মে কোনো মূল্যসীমা না থাকার সুযোগে সেদিন দাম বেড়ে হয় ৪৮৫ টাকা। এক দিনেই বাড়ে ৭৩৫ শতাংশ। আগের দিন দাম ছিল ৫৯ টাকা।

সেখানেই থেমে থাকেনি। এক পর্যায়ে তা এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এর পরের বছর ২৫ শতাংশ, পরের বছর ১০ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ, পরের বছর ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়া কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন ২৮২ টাকা। সব বোনাস শেয়ার হিসেবে নিলেও এখন দাম ৮২৫ টাকা দাঁড়ায়। অর্থাৎ সাত বছর রেখেও কোনো মুনাফা পাননি বিনিয়োগকারীরা।

ওটিসি থেকে ফেরা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর আকাশচুম্বী হয়ে পরে ধসের কারণে ব্যাপক লোকসান হয়েছে বিনিয়োগকারীদের

কোম্পানিটি গত ৩১ জানুয়ারি তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৩১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ১১ পয়সা।

গত দুই বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দর ওঠে ২০১৯ সালে ১০ অক্টোবর ৬৯১ টাকা ৬০ পয়সা। এরপর এই সময়ে আর কখনও এই দরে লেনদেন হয়নি।

আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ

২০১৮ সালে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে আসার পরই আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর ১৩০ টাকায় শুরু হয়ে ১৪৩ টাকায় লেনদেন হয়। এরপর আরও বেড়ে ১৮০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার দর ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা। তাও কিছুটা ভদ্রস্ত দেখাচ্ছে। এক মাসে সর্বনিম্ন দাম ছিল ২২ টাকা ৯০ পয়সা।

গত দুই বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর ওঠেছে ৬৩ টাকা ২০ পয়সা।

মূল মার্কেটে ফেরার পর এক বার ১০ শতাংশ এবং একবার ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে আলিফ। অর্থাৎ বোনাস শেয়ার পেয়েও বিনিয়োগকারীরা তাদের লোকসান কাটাকে পারেননি।

সোনালী পেপার

সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল ২০১৯ সালের ২ জুলাই থেকে মূল মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে। মূল বাজারে ফিরিয়ে আনতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ধরা হয় ২৭৩ টাকা। পরে বাড়তে বাড়তে দাম দাঁড়ায় ৩৫০ টাকায়।

এক বছরের মধ্যে দাম কমে হয়েছে ২০৬ টাকা ২০ পয়সা। আর মূল মার্কেটে আসার পর দুই বারে ১০ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার দিয়েছে তারা।

অর্থাৎ বোনাস শেয়ার নিয়েও বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানে আছেন।

গত ২৫ এপ্রিল কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিকের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে শেয়ার দর যে অতিমূল্যায়িত, তা বোঝাই যায়।

বছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২৯ পয়সা।

এই হারে আয় করলে কোম্পানিটির বর্তমান মূল্য তুলতে সময় লাগবে ৬৮ বছর।

অবশ্য এটাও ঠিক যে, এর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য অনেক। সব শেষ নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ১০ টাকার শেয়ারে সম্পদ মূল্য আছে ৩০৭ টাকা ৮৮ পয়সা।

কোম্পানিটি তাদের নতুন প্রোডাকশন লাইন চালুর ঘোষণা দিয়েছে। জানানো হয়েছে, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার বক্স তৈরির এই নতুন লাইনের উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি দিন এক লাখ পিস। এবং তারা এও জানিয়েছে যে, নতুন উৎপাদন লাইনের যে উৎপাদন ক্ষমতা তার পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

তবে এই খবরেও শেয়ার দাম বাড়াতে পারেনি। সম্পদমূল্যের চেয়ে ১০০ টাকা কমে লেনদেন হচ্ছে বর্তমানে।

চার কোম্পানির শেয়ার দর থামার নাম নেই

গত ১৩ জুন ওটিসি থেকে ফেরা চার কোম্পানির প্রতিদিনই দাম ১০ শতাংশ বা শতকরা হিসেবে সামান্য কিছু কম বাড়বে, এটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে।

চারটি কোম্পানিই জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করেছে।

মুন্নু ফেব্রিক্সের লেনদেন শুরু হয়েছিল ১০ টাকায়, ক্রমাগত বেড়ে পৌঁছেছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সায়। আর বৃহস্পতিবার এই দামে হাতবদল হয়েছে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার ১১৭টি।

চারটি কোম্পানির মধ্যে এই একটি কোম্পানির শেয়ারই লেনদেন হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ জুন ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৫২১টি। সেদিন দাম ছিল ২৩ টাকা ৩০ পয়সা।

তার আগের দিন ২১ লাখ ৪৮ হাজার ২৩১টি শেয়ার হাতবদল হয় ২১ টাকা ২০ পয়সায়।

তারও আগের দিন ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫টি শেয়ার লেনদেন হয় ১৯ টাকা ৩০ পয়সা।

এর আগে একটি থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২০৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

চলতি বছর ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে মাত্র ৪ পয়সা। এই হারে আয় করতে থাকলে বর্তমান শেয়ার মূল্য ফিরে পেতে সময় লাগবে ৪৮০ বছর।

কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ২৭ টাকা ৩০ পয়সা।

ওটিসি মার্কেটে মনোস্পুলের শেয়ারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। প্রতিদিন এই কোম্পানির দামও বেড়েছে ১০ শতাংশ বা আশেপাশে। বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রয়াদেশ থাকলেও বিক্রেতা এখন পর্যন্ত নেই, যদিও দাম বেড়ে হয়েছে ১২৯ টাকা ২০ পয়সা।

এই ১০ দিনে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ সংখ্যক শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ হাজার ৩৮টি। ২০ জুন এই লেনদেনের দিন দাম ছিল ৮৮ টাকা ৪০ পয়সা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ১৩০ টাকার আশেপাশে শেয়ার বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৮০৯টি।

চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় মাত্র ২৯ পয়সা। আয় বাড়াতে না পারলে বর্তমান শেয়ার মূল্য তুলতে সময় লাগবে ৩৪৬ বছর।

কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য অবশ্য ভালো, ১২৫ টাকা ৬১ পয়সা।

একই অবস্থা তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের। মার্কেটে ফেরার দিন শেয়ারের মূল্য ছিল ১২ টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৬০ পয়সায়।

এক সঙ্গে ফেরা চার কোম্পানির মধ্যে এটির আয়ই সবচেয়ে বেশি। চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে তাদের ইপিএস হয়েছে ৯৮ পয়সা।

দাম বেড়ে প্রায় আড়াইগুণ হয়ে গেছেও কোম্পানিটির শেয়ারের বিক্রেতা নেই। বৃহস্পতিবার ৩০ টাকা ৬০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০০টি শেয়ার। বাকি দিন কোনোদিন একটি, কোনোদিন দুইটি শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১০ শতাংশ বেশি দামে।

এই কোম্পানিটিরও শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বেশ আকর্ষণীয়; ৮০ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ার সম্পদমূল্যের দিক দিয়ে এরা এগিয়ে।

আরেক কোম্পানি পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার ১৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সা।

তবে ১০ দিনেও বলার মতো বিক্রেতা নেই। সর্বোচ্চ ৯২১টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ শেয়ারধারীরা দাম আরও বাড়বে, এই আশায় অপেক্ষা করে আছেন। এর আগে কোনোদিন একটি কোনোদিন দুটি, একদিন ১০১টি এবং একদিন ৬৬টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪৪ পয়সা। এই হারে কায় করতে থাকলে বর্তমান শেয়ার মূল্য উঠতে সময় লাগবে ৬৯ বছর।

এই কোম্পানিরও শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য আকর্ষণীয়; ৮৩ টাকা ৯৫ পয়সা। বস্ত্র খাতে আর কোনো কোম্পানির শেয়ার প্রতি এত সম্পদ নেই।

এ বিভাগের আরো খবর