রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি নির্মাণ খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় এই শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় কর কমানোসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে চিঠি লিখেছেন ঠিকাদারি ব্যবসায়ীরা।
ঠিকাদারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএসিআই) ১৭ জুন অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠিতে নির্মাণ খাতের বর্তমান অবস্থা ও এ থেকে উত্তরণের কথা তুলে ধরে।
নির্মাণ খাত হচ্ছে বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম শিল্প। বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ১০ শতাংশের বেশি। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে দেশের নির্মাণশিল্পে অস্থিরতা চলছে, যা এখনও অব্যাহত। নতুন বাজেটে এ খাতের জন্য সরকার কিছুটা করসুবিধা দিলেও সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, তাতে তেমন কাজে আসবে না।
ভবিষ্যতে এ শিল্পের সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এতে করে দেশের উন্নয়ন কাজকর্ম বিশেষে করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এমন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণশিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা।
বিএসিআইয়ের সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদারের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নির্মাণশিল্পের জন্য কিছু করপ্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যাতে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। পর্যবেক্ষণসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর।
‘বিএসিআইর প্রতিনিধিরা মনে করেন, একদিকে যেমন নির্মাণশিল্প খাতটির অস্তিত্বের প্রশ্ন, অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজন কর আহরণ করা। এমতাবস্থায় নির্মাণ খাতকে নিশ্চিত ধ্বংস হতে রক্ষা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’
এ জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু দাবি উল্লেখ করা হয়েছে অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠিতে।
যোগাযোগ করা হলে বিএসিআই সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশীয় নির্মাণশিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। আশা করছি সরকার আমাদের ডাকে সাড়া দেবে এবং নির্মাণ খাতকে গভীর সংকট থেকে উদ্ধার করবে।’
এবারের বাজেটে ঠিকাদার ব্যবসায়ীদের উৎসে করহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এতে সর্বনিম্ন করহার ৩ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এই করপ্রস্তাব কার্যকর হলে তাদের টিকে থাকা কঠিন হবে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হবেন।
অর্থমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠিতে বিএসিআই বলেছে, ‘প্রাক-বাজেট আলোচনায় ঠিকাদারদের বিলের ওপর সর্বোচ্চ করহার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং অর্থমন্ত্রী এটি কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাজেট ঘোষণায় দেখা গেছে, কর কমানো হয়নি; বরং আরও বাড়ানো হয়েছে।’
বিএসিআই আরও বলেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে সর্বোচ্চ করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ। অথচ নতুন বাজেটে নির্মাণ খাতে এ করহার ৫ থেকে ৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়, যা প্রকারান্তরে মোট করভার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়াবে।
এ অবস্থায় নির্মাণশিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিল থেকে আয়কর কাটার হার ৪ শতাংশ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।