বকেয়া বেতনের দাবিতে রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে এয়ারলাইনসটির ৯ জন পাইলট।
নোটিশে অবিলম্বে কর্মরত পাইলটদের বকেয়া বেতন ও সিমুলেটর ট্রেনিংয়ের খরচ দিতে এয়ারলাইনসটিকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পাইলটরা যাতে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান এজন্য এনওসি বা অনাপত্তিপত্র দিতেও বলা হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে গত বছরের মার্চ থেকে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে বেসরকারি এয়ারলাইনস রিজেন্ট এয়ার। গত দেড় বছরে বারবার তারিখ দিয়েও ফ্লাইটে ফিরতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। গত দেড় বছর পাইলট কিংবা অন্যকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিকে কোনো বেতনও দেয়নি তারা। সবাইকে রাখা হয়েছে অবৈতনিক ছুটিতে।
এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও এনবিআরের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনা ছাড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বন্ধ হওয়ার আগে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটের টাকাও ফেরত দেয়নি কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সরকারি ফি বাবদ বেবিচক এয়ারলাইনসটির কাছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পায়।
এ ছাড়া তাদের কাছে এনবিআরের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ফ্লাইটে ফিরতে বেবিচককে ধীরে ধীরে পাওনা পরিশোধের কথা বলা হলেও কয়েক মাস ধরে কোনো টাকাই দিচ্ছে না রিজেন্ট।
এই দেড় বছরে বেশ কয়েকবারই ফ্লাইটে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিল রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ। সবশেষ চলতি বছরের মার্চে ফ্লাইট শুরুর কথা জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি সে উদ্যোগও।
এয়ারলাইনসটির বহরে বর্তমানে রয়েছে দুটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন ও একটি ড্যাশ এইট মডেলের উড়োজাহাজ। কোনো উড়োজাহাজই বর্তমানে ওড়ার মতো অবস্থায় নেই। এর মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে একটি বোয়িং সেভেন থ্রি সেভেন উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক উড়াল সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকি দুটির ইঞ্জিন এখনও দেশে আসেনি।
শুধু বকেয়া বেতনই নয়, বন্ধ হওয়ার পর পাইলটদের সক্রিয় রাখতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণগুলোও শেষ করেনি রিজেন্ট। আন্তর্জাতিক বেসমারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়মানুসারে প্রত্যেক পাইলটকে নির্দিষ্ট সময় পরপর বাধ্যতামূলকভাবে সিম্যুলেটরে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে হয়।
পাইলটরা বলছেন, লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে নিজ খরচেই ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হয়েছে তাদের।
রিজেন্টের পাইলট ক্যাপ্টেন তারেক হাদি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের মার্চের পর কোনো বেতনও দেয়া হয়নি। বারবার বলা হয়েছে আমরা ফ্লাইটে ফিরব কিন্তু সেটিও সম্ভব হয়নি। আমরা যে অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করব রিজেন্ট আমাদের এনওসি (অনাপত্তি পত্র) দিচ্ছে না।
‘এখন সমস্যা আমাদের রুজি রুটির। আমরা পাইলট, আমরা তো চাইলেই অন্য কোনো কাজ সহসা শুরু করতে পারব না। অন্তত আমাদের এনওসি দিলেও আমরা অন্য কোথায়ও চাকরির চেষ্টা করতে পারি। এ কারণেই সিনিয়ররা উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। আমিও তাদের সাথে আছি।’
রিজেন্ট এয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর। এক দশক যেতে না যেতেই জোর ধাক্কা খেল এয়ারলাইনসটি। বন্ধ হওয়ার আগে দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্য কলকাতা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, মাসকট ও দোহায় ফ্লাইট চালাচ্ছিল এয়ারলাইনসটি।
প্রায় দুই যুগে দেশে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র দুটি। এ সময়ের মধ্যে একে একে পাখা গুটিয়েছে অ্যারো বেঙ্গল, এয়ার পারাবত, রয়্যাল বেঙ্গল, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, বেস্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ার। এর মধ্যে শুধু জিএমজি ও ইউনাইটেড আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালাত।