বিমার শেয়ারের দল বেঁধে ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে। তবে এবার ঊর্ধ্বগতি নয়, নিচের দিকে নামল এই খাতের সিংহভাগ শেয়ার।
এক বছরে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পর এই দর পতন মূল্য সংশোধন নাকি অতিমূল্যায়িত শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আনীহা-সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে আরও পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন একজন বিশ্লেষক।
মঙ্গলবার বিমা খাতে এই ধসের দিন দল বেঁধে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে বস্ত্র খাতে। এ নিয়ে টানা দুই দিন এই খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম বাড়ল।
প্রধান প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতেও রক্তক্ষরণ দেখা গেছে।
আর ওষুধ ও রসায়ন, বিবিধ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এব প্রকৌশল খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।
সব মিলিয়ে দিনটি ভালো গেল না বিনিয়োগকারীদের জন্য। গত ৩০ মে ৬ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করার পর সেখান থেকে ৬ হাজার ১০০ পয়েন্ট উঠতে তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে পর দিনই সেখান থেকে নেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে দিন শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে তা ৬ হাজার ১০৫ পয়েন্টে স্থির হয়েছে।
দিন শেষে বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। দর পাল্টায়নি একটির। লেনদেন স্থগিত ছিল দুটির, কমেছে বাকি ৪৪টির।
উল্টো চিত্র বস্ত্র খাতে। এ খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টির, কমেছে ৮টির। বাকি ৫টির দাম ছিল অপরিবর্তিত।
ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির, কমেছে ১৯টির, পাল্টায়নি ৫টির।
অর্থবছর শেষ হতে চলা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬টি, কমেছে ১৭টির, অপরিবর্তিত ছিল বাকি ১৪টির।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা খাতের শেয়ার আগে থেকেই অতিমূল্যায়িত। এ খাতের শেয়ারের দর কমা উচিত। তবে বর্তমানে যেভাবে শেয়ার দর কমছে সেটি মূল্যসংশোধন নাকি পতন সেটি এখনই স্পষ্ট করে বলা ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘জুন ক্লোজিং হিসেবে বস্ত্র খাতের শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। তবে শুধু বস্ত্র নয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরও এখন তলানিতে আছে। বিমার বিকল্প হিসেবে কম দামের শেয়ার বা ভালো ফান্ডমেন্টাল খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।’
উচ্চাশার বিমায় এবার তীব্র হতাশা
৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে অস্বাভাবিক উত্থান হওয়া বিমা খাতের বিনিয়োগকারীরা এখন আতঙ্কে। দুই সপ্তাহ ধরে টানা কমছে শেয়ার দর।
বিমার ঠিক উল্টো চিত্র এই খাতে। সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানির ৭টিই বিমার কোম্পানি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ১৭.১৯ শতাংশ বা ১৬ টাকা ৩০ পয়সা কমেছে কোম্পানিটির দর। এক দিনে ১০ শতাংশ দাম বাড়া বা কমার সার্কিট ব্রেকার থাকলেও লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোম্পানির ক্ষেত্রে দাম বাড়া বা কমার কোনো সীমা ছিল না।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।
এ ছাড়া রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ৬.৭৬ শতাংশ, গ্রিনডেলটা ৬.৪৪, ফারইস্ট লাইফ ৫.৯৮, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের ৫.৫২, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৫.৪৮, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৫.১৯, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৫.০৮, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর হারিয়েছে ৫ শতাংশ।
এই খাতে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের। ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ৪.৩২ শতাংশ দাম বেড়েছে কোম্পানিটির।
এই কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৬০ লাখ ৪৫ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৬০ শতাংশ কেনার শর্ত পূরণ করতে ছয় পরিচালক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ ছাড়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৬ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩.৪১ শতাংশ, এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্মের ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ১.৬৫ শতাংশ।
বিমা খাতে ধস হলেও বেড়েছে লেনদেন। আগের দিন ২৬৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হলেও আজ হাতবদল হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বস্ত্রে আবার উত্থান
টানা দুই দিন সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতে। আজ হাতবদল হয়েছে ৪৭৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার। এটি আগের দিনের চেয়ে বেশি। সোমবার হাতবদল হয়েছিল ৩৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
টানা দুই দিন এই খাতের শেয়ারে চাঙ্গাভাব দেখা গেছে। সোমবারের মতোই সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ার তালিকায় বস্ত্রের কোম্পানিগুলো ছিল এগিয়ে।
সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টিই ছিল এই খাতের। আর সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ২০টি কোম্পানির ১৪টি এই খাতের।
এক দিনে যত দাম বাড়া সম্ভব ততই বেড়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, স্কয়ার টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, ম্যাকসন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, ড্রাগন স্যুয়েটার, আরগন ডেনিম, হাওয়েল টেক্সটাইল, মুন্নু ফেব্রিক, এনভয় টেক্সটাইল, কাট্টালী টেক্সটাইল, আফির ইন্ডাস্ট্রিজের দাম।
ঢালাও উত্থানের দিন এই খাতে আনলিমা ইয়ার্ন, এপেক্স স্পিনিং, এসকোয়ার নিট, রহিম টেক্সটাইল, আর এন স্পিনিং, স্টাইলক্রাফট ও তুংহাই নিটের দাম কমেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে রহিম টেক্সটাইলের। ৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ২.৩ শতাংশ কমেছে শেয়ারটির দাম। স্টাইলক্রাফট দর হারিয়েছে ২ টাকা বা ১.৩৭ শতাংশ।
ব্যাংক আবার ঝিমুনিতে
ব্যাংক খাতে একদিন বাড়ে তো পাঁচ দিন কমে- এমন প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। আগের দিন ব্যাংকের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি সূচক বাড়ালেও এবার এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ১৯টি, বেড়েছে কেবল সাতটি।
তবে সর্বাধিক বৃদ্ধি পাওয়া বা সবচেয়ে কমা, কোনো তালিকাতেই ব্যাংক খাতের কোম্পানিকে দেখা যায়নি।
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে রূপালী ব্যাংক। এক বছর বিরতি দিয়ে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণার পর ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৪৬ শতাংশ দাম করা প্রমাণ করে যে এই ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের পছন্দ হয়নি। অথচ লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটির শেয়ার দর টানা চারদিন বেড়ে ২৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
এরপর সবচেয়ে বেশি কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের দাম। ১ টাকা ৪০ পয়সা বা ২.৮৪ শতাংশ দাম হারিয়েছে কোম্পানিটি।
দর হারানো বাকি সব কোম্পানির দাম কমেছে ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার; ১ টাকা ৮০ পয়সা বা ২.১৪ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়া, ইবিএল, এক্সিম, মার্কেন্টাইল, এমটিবি, এনবিএলের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ পয়সা করে।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৫৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে বেশ কম। সোমবার হাতবল হয়েছিল ২১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
আগ্রহ ধরে রাখল প্রকৌশল, ওষুধ রসায়ন
প্রকৌশল খাতে হাতবদল হয়েছে ১৯৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল ২০৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এই খাতে ১৭টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৪টির দাম।
ওষুধ রসায়নে লেনদেন হয়েছে ১৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১৪৩ কোটি টাকা।
এই খাতে ১৫টির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৩টির দাম।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১০৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস আগের দিনের তুলনায় ১ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৪ পয়েন্টে।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৪টির, কমেছে ২০৪টির। দর পাল্টায়নি ৩১টির।
লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ১৭ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৬৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১০২ কোটি টাকা।