আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি ধরতে গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী) ও এস এম মুনিরুজ্জামানকে ডেকেছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তাদের দেখা করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আদালতের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে প্রধান করে এ কমিটি করা হয়। কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাবেক বিচারক এবং আমলারা রয়েছেন।
কমিটি বিআইএফসির পাশাপাশি অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের ঘটনাও খতিয়ে দেখছে।
বিআইএফসি ইস্যুতে তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছে।
এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ জন্য তদন্ত কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তার পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছে। আগামী মাসেই এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে গভর্নরের কাছে জমা দেবে।
বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদ অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে একটি বিদেশি অংশীদারী প্রতিষ্ঠানের করা আবেদন নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর আদেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলে, ২০০২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
আদালতের ওই পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধান বা তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০টির অবস্থা নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
এর মধ্যে সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও সাবেক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক এমডি পি কে হালদার একাই ধ্বংস করেছেন চারটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
এর মধ্যে পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য অবসায়ক নিয়োগ করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও বিআইএফসিতে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে আদালত।
এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পি কে হালদার লোপাট করেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে। এসব অনিয়মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।