বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

২৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়াল রেমিট্যান্স

  •    
  • ২১ জুন, ২০২১ ১৮:১৫

দেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। অর্থবছর শেষ হতে আরও ১৩ দিন বাকি। এই ১৩ দিনে যদি ৯২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, তাহলেই এবার ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২৪ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ২৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়ে চলেছে। প্রতি মাসেই বেশি বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি জুন মাসের ১৭ দিনেই (১ থেকে ১৭ জুন) ১২৪ কোটি ৪৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।

আর সব মিলিয়ে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাস ১৭ দিনে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৭ জুন) ২ হাজার ৪০৮ কোটি ১৭ লাখ (২৪.০৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

দেশের ইতিহাসে এর আগে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি। অর্থবছর শেষ হতে আরও ১৩ দিন বাকি। এই ১৩ দিনে যদি ৯২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে, তাহলেই এবার ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।

এমন প্রত্যাশা কিছু দিন ধরেই জানিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মাসখানেক আগে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

অর্থমন্ত্রীর সেই আশার হিসাব মেলাতে গিয়ে দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ মাস জুনের ১৭ দিনে যে রেমিট্যান্স এসেছে, বাকি ১৩ দিনে যদি সেই হারে আসে, তাহলে এই ১৩ দিনে আসার কথা ৯৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে মাস শেষে মোট রেমিট্যান্সের অঙ্ক দাঁড়াবে ২১৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারে।

আর ২০২০-২১ অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ গিয়ে ঠেকবে ২৫ দশমিক ০৩ ডলারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত দুই ঈদের আগে রেমিট্যান্স বেশি আসে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোরবানির ঈদ। কোরবানির গরু কেনাসহ ঈদের অন্য খরচের জন্য এই মাসের শেষের দিকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘সে হিসাবে অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, এবার রেমিট্যান্স ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াচ্ছে।’

গত মে মাসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ (২২.৮৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

এই ১১ মাসে গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ (১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে, যা ছিল এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স।

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ভাটা পড়ে। ওই মাসে ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

এই বছরের মার্চ মাসে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের মার্চের চেয়ে ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার এসেছিল।

মহামারির মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম মাস গত বছরের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা এক মাসের হিসাবে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

মহামারির কারণে রেমিট্যান্স কমার আশঙ্কা করা হলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। কোভিডের আঁচ বিশ্বের অর্থনীতিতে লাগার পর গত বছরের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমলেও এরপর থেকে বাড়ছেই।

গত আগস্টে এসেছিল ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বরে আসে ২১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। অক্টোবরে এসেছিল ২১১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। নভেম্বরে আসে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে আসে ২০৫ কোটি ডলার।

এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে ১৭৮ কোটি ডলারে নেমে আসে। মার্চ মাসে আসে ১৯১ কোটি ডলার। এপ্রিলে এসেছিল ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।

বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কায় ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স ২২ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে কমবে ২০ শতাংশ। তবে দেখা গেছে, পাশের দেশ ভারতে ৩২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটি বাংলাদেশির পাঠানো এই অর্থ। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

৪৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁতে চলেছে রিজার্ভ

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ভর করে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েই চলেছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২৮ এপ্রিল অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। তবে গত ৪ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

এক মাসেরও কম সময়ে ১ জুন তা ফের ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত তিন সপ্তাহে তা আরও বেড়ে ৪৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এই অর্থবছরেই অর্থাৎ, জুন মাসের মধ্যেই রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এ বিভাগের আরো খবর