সবুজ উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ অনেকগুলো পরিকল্পনা করেছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এই উন্নয়নের পথে এগিয়ে আসতে হবে। এসব পরিকল্পনা-উদ্যোগকে বাস্তবসম্মত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে। তৈরি পোশাক খাতকে যেভাবে সবুজ উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা দেয়া হয়, চামড়াশিল্প খাতে সেভাবে দেয়া হয় না। ফলে বাস্তবায়ন সম্ভব, এমন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুতে হবে।
রোববার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) ও বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ‘বিল্ড ব্যাক গ্রিনার’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ ইউন জো ওআইই। সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার ও নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
মূল প্রবন্ধে ইউন জো ওআইই বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ সবুজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের মতো দক্ষিণ কোরিয়াও সবুজ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। সেখানে সরকারের সবুজ উন্নয়ন নীতির বাস্তবায়নে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ জন্য বাংলাদেশেও সরকারের পাশাপাশি সবুজ উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সবুজ উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। সেচ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হয়েছে। অন্যান্য খাতকেও সবুজ পথে এগোতে হবে। আমরা তৈরি পোশাক খাতকে যেভাবে সবুজ উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা দিই, চামড়াশিল্প খাতে সেভাবে দিই না। এজন্য কীভাবে অর্থায়ন সম্ভব সে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ তামিম বলেন, জ্বালানি খাতকে কম কার্বন নিঃসরণের পথে এগোনোর কথা বলা হচ্ছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য যে বাড়তি ব্যয় করতে হবে, তা জোগান দেয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমাদের আছে কি না, সেটি বিবেচনা করতে হবে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ওই চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কীভাবে এগোবে, তার একটি আর্থিক ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা দরকার।’
বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের অনেক পরিকল্পনা করেছে উল্লেখ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সবুজ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাতিসংঘের কাছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
‘কিন্তু এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো আর্থিক সামর্থ্য ও সক্ষমতা আমাদের আছে কি না সে বিষয়টি মনে রাখতে হবে। সবুজ উন্নয়ন বাস্তবায়ন সম্ভব, এমন পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে।’
অ্যাপেক্স ফুটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মনজুর বলেন, ‘দেশে অনেক সবুজ কারখানা গড়ে উঠছে। এলইডি বাল্বকে সবুজ প্রযুক্তি বলছি। কিন্তু এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য কোথায় ফেলা হচ্ছে, সেগুলো পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না, তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
‘যে কোনো পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে তার ব্যবহার এবং ফেলে দেয়ার পর তা যাতে পরিবেশের ক্ষতি না করে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি।’