টানা দুই দফা দাম বাড়ানোর পর এবার দেশের বাজারে সব ধরনের স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বিশ্ববাজারে বড় দরপতন হওয়ার পর এবার দেশে ভরিতে স্বর্ণের দাম কমানো হলো ১ হাজার ৫১৬ টাকা, হ্রাসকৃত এই নতুন দাম রোববার থেকে বাজারে কার্যকর হবে।
স্বর্ণের দাম কমানোর ফলে দেশের বাজারে জুয়েলারি ব্যবসার অচলাবস্থা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করছেন বাজুস-সংশ্লিষ্টরা।
তবে বাজারে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে সর্বশেষ গত ২৩ মে থেকে স্বর্ণের নতুন দাম কার্যকর হয়, যা শনিবার পর্যন্ত বহাল ছিল।
বাজুস নির্ধারিত নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের প্রতি গ্রাম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৭০ টাকা। একইভাবে প্রতি গ্রাম ২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ৯০০ টাকা। ১৮ ক্যারেটের ৫ হাজার ১৫০ টাকা এবং সনাতনী ৪ হাজার ২৬৫ টাকা।
এই নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৬৬ টাকা ৮৮ পয়সা। শনিবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণের দাম ছিল ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা ৬০ পয়সা। শনিবার পর্যন্ত ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ছিল ৭০ হাজার ৩৩৩ টাকা।
আর ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের নতুন দাম হবে ৬০ হাজার ৬৯ টাকা ৬০ পয়সা। বর্তমান দাম রয়েছে ৬১ হাজার ৫৮৪ টাকা।
প্রতি ভরি সনাতনী স্বর্ণের নতুন দাম হবে ৪৯ হাজার ৭৪৬ টাকা ৯৫ পয়সা। এ ক্যাটাগরির স্বর্ণের বর্তমান দাম ৫১ হাজার ৬২ টাকা।
অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। এতে আগের মতোই দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ হাজার ৪৩৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ হাজার ২২৫ টাকা ও সনাতনী প্রতি ভরি ৯৩৩ টাকায় বিক্রি হবে।
এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসজুড়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় মে মাসে দেশের বাজারে দুই দফায় ভরিতে স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়ায় বাজুস।
ওই সময় স্বর্ণের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বাজুস জানায়, করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট ও নানা জটিল সমীকরণের কারণে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধ থাকা, আমদানি পর্যায়ে শুল্ক জটিলতা (উপকরণ কর রেয়াত) ও নানা ধরনের দাপ্তরিক জটিলতার কারণে গোল্ড ডিলাররা স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারছে না। তা ছাড়া চাহিদার বিপরীতে জোগান কম থাকায় দেশীয় বুলিয়ান/পোদ্দার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়। ঠিক তেমনি বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমে স্বর্ণের দাম।’
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে সবশেষ স্বর্ণের দাম সমন্বয় করার পর এখন বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম পুনরায় কমেছে। সেই হ্রাসকৃত দামের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারেও এখন স্বর্ণের দাম ভরি প্রতি ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমানো হলো।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাকালীন বিশ্ব অর্থনীতির জটিল সমীকরণের মধ্যে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হওয়ায় দেশের বাজারে অচলাবস্থা কাটাতে ও ভোক্তাসাধারণের কথা চিন্তা করে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে বাজুস নির্ধারিত মূল্যতালিকায় স্বর্ণ বিক্রির অনুরোধ করা হয়েছে।