বাংলাদেশে সব মিলিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভু্ক্ত ব্যাংকগুলোর অনেকটাই স্বস্তিতে।
এই ৩১টি ব্যাংকে গড় খেলাপির হার ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ হলেও যেগুলো পুঁজিবাজারে নেই, সেগুলোর খেলাপির হার এর চেয়ে তিন গুণ বেশি।
তবে পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংক আছে, সেগুলোর মধ্যেও পাঁচটি আছে অস্বস্তিতে, যার মধ্যে আবার তিনটি ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ।
এর মধ্যে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি খেলাপি আইসিবি ইসলামিক, আরব বাংলাদেশ বা এবি আর রূপালী ব্যাংকেরটা বাদ দিলে পরিস্থিতিটা আরও স্বস্তিদায়ক হতে পারত।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে খেলাপির হার ৭৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ আর রূপালীর ১১ দমমিক ৯৯ শতাংশ। এর মধ্যে এবির খেলাপি পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে আর আইসিবি ইসলামিকের উন্নতি হয়েছে।
এই তিনটি ব্যাংক বাদ দিলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ওয়ান ও উত্তরা ব্যাংকের। প্রথমটির খেলাপি ঋণের হার বিতরণ করা ঋণের ৮ শতাংশের বেশি, দ্বিতীয়টির ৭ শতাংশের বেশি।
মোট ঋণ কত
মার্চ পর্যন্ত পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ৮ লাখ ৫০ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা।
এই ৪২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আইসিবি ইসলামিক, এবি ও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণই ৯ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।
এই তিনটি ব্যাংক ছাড়া বাকি ২৮টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বাকি ২৮টি ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫২ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। শতকরা হারে খেলাপি ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর তুলনায় তিন গুণ।
পুঁজিবাজারের ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ
রাষ্ট্রায়ত্ব ছয়টি ব্যাংকের মধ্যেও রূপালীর অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো।
এর মধ্যে সোনালীর খেলাপি ঋণের হার ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, অগ্রণীর ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, জনতার ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বেসিকের ৫৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ আর বিডিবিএলের ৩৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পুঁজিবাজারের ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থানে কেন?
এই বিষয়টি নিয়ে জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অনেক বেশি রেসপনসিবিলিটি থাকে। এখানে আরও বেশি কেয়ারফুল হতে হয়। কারণ, বিনিয়োগকারীদের বিষয় সব সময় মাথায় রাখতে হয়।’
অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বাইরের ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় লোক থাকে কম। কোম্পানি ৫ থেকে ৬ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কয়েকজনকে ম্যানেজ করে চললে হয়। কিন্তু পুঁজিবাজারে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী থাকে। সেখানে অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি), গভর্ন্যান্স (সুশাসন) রেসপনসিবিলিটি (দায়িত্বশীলতা) অনেক বেশি। এ জন্য ব্যাংকগুলো তুলনামূলক ভালো করছে।‘
করোনাকালে সুবিধার পরেও বেড়েছে খেলাপি
করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলেও খেলাপি না করার নির্দেশনা ছিল।
ধারণা করা হচ্ছিল এই নির্দেশনার কারণে খেলাপি ঋণ কমে আসবে ব্যাংকের। কিন্তু ঘটেছে উল্টোটা। এই সময়ে বেড়ে গেছে ঋণ।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগেরও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কমেছেও।
এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক খেলাপি ঋণের দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।
ছয়টি ব্যাংকে খেলাপির হার বিতরণ করা ঋণের ৩ শতাংশের কম। চারটি ব্যাংকের খেলাপি ৩ থেকে ৪ শতাংশের কম।
আরও ১০টির খেলাপি ঋণের হার ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে।
ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় শতভাগ খেলাপিমুক্ত ব্যাংক অনেকটাই অসম্ভব ব্যাপার। বাংলাদেশে কাজ করা বহুজাতিক বেশ কিছু ব্যাংকও এই খেলাপি সমস্যায় ভুগছে। আর খেলাপির বিরপীতে বেশিরভাগ ব্যাংকই সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে নিরাপদ অবস্থানেই আছে।
বেশি খেলাপি তিন ব্যাংকে
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক: বিতরণ করা ঋণের অধিকাংশই খেলাপিতে পরিণত। মার্চ পর্যন্ত মোট ঋণ ৮৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬৬৯ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে এই হার ৭৮ দশমিক ১৮ শতাংশ।
তবে ডিসেম্বরের পরিসংখ্যানের তুলনায় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও ভালো দেখাচ্ছে। সে সময় খেলাপি ঋণ ছিল ৬৭১ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণকৃত ঋণের ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এবি ব্যাংক: ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মার্চ শেষে সেটা সামান্য বেড়ে ৪ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা হয়েছে। এটি বিতরণকৃত ঋণের ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। ব্যাংকটির মোট ঋণ ২৭ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।
রূপালী ব্যাংক: পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রীয় ব্যাংকটির মোট ঋণ ৩২ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
তবে ডিসেম্বরের চেয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তখন ব্যাংকটিকে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল খেলাপী।
খেলাপি ঋণে সবচেয়ে ভালো করেছে যারা
৫ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ যেগুলোর
ওয়ান ব্যাংক: ব্যাংকটির মোট ঋণ ২২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ওই সময় মোট ঋণের ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ ছিল খেলাপি।
উত্তরা ব্যাংক: মোট ঋণ ১৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ৯৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৭৫৩ কোটি টাকা। যা ওই সময় মোট ঋণের ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট ঋণ ছিল ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, যা ওই সময় মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
ট্রাস্ট ব্যাংক: ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মোট ২১ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯৬ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ছিল।
এনসিসি ব্যাংক: মোট ঋণ ১৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৬৭ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ ছিল।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: মোট ঋণ ১৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ৮৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৭৫ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।
ন্যাশনাল ব্যাংক: মোট ঋণ ৪৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট: মোট ঋণ ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৮২৬ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।
চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে যেগুলো
মার্কেন্টাইল ব্যাংক: মার্চ শেষে মোট ঋণ ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। খেলাপি ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংক: মোট ঋণ ২২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭২৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: মোট ঋণ ১৯ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৮৯৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৬৫ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
পূবালী ব্যাংক: মোট ঋণ ৩১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি বেড়ে হয় ১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮২৭ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছিল।
ব্র্যাক ব্যাংক: ব্যাংকটি মোট বিতরণ করেছে ২৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। মার্চ শেষে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮০০ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক: মোট ঋণ ৩২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯৩ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক: ব্যাংকটি ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংক: মোট বিতরণ ৪০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। খেলাপি ১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল খেলাপি।
আইএফআইসি ব্যাংক: মোট ঋণ ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ০৫ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
সিটি ব্যাংক: ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ ২৯ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি এক হাজার ১৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
তিন থেকে চার শতাংশের কম যেগুলো
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ব্যাংকটির মোট ঋণ বিতরণ ৪৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩.৬২ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংক: মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণ বিতরণ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
ঢাকা ব্যাংক: মার্চ শেষে ব্যাংকটি মোট বিতরণ করেছে ১৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক: মোট বিতরণ ৩৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৯৮ কোটি টাকা, যা ওই সময় মোট ঋণের ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
তিন শতাংশের কম খেলাপি যেগুলোর
ইস্টার্ন ব্যাংক: ব্যাংকটি মোট ঋণ দিয়েছে ২১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ৬৫৪ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৬০৯ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
প্রিমিয়ার ব্যাংক: মার্চ শেষে মোট বিতরণ ২১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬০৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৩৫ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংক: ব্যাংকটি মোট বিতরণ করেছে ২০ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৬৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে, যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮০ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
এনআরবিসি ব্যাংক: পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত নতুন ব্যাংক এনআরবিসি মার্চ শেষে মোট ৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ২২২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১৪০ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
ব্যাংক এশিয়া: খেলাপি ঋণের দিক থেকে এই ব্যাংকটি সবচেয়ে ভালো দুটি ব্যাংকের একটি। নতুন করে খেলাপি হয়নি, উল্টো আগের ঋণ আদায় করেছে ব্যাংকটি।
মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকটি বিতরণ করেছে মোট ২৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৬১৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
করোনার বছরে ব্যাংকটি ১৭৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছে।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৯৩ কোটি টাকা। যা ওই সময় বিতরণকৃত ঋণের ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক: শতকরা হারে এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ সবচেয়ে কম। এদের মোট বিতরণ ২৭ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। মার্চ শেষে খেলাপি ৬৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯২ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এই ব্যাংকটিও তিন মাসে ৫৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছে।