বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিপুল লেনদেনেও উচ্ছ্বাসের ঘাটতি পুঁজিবাজারে

  •    
  • ১৭ জুন, ২০২১ ০৯:৫২

এক মাসে পুঁজিবাজার সংশোধনে না গেলেও ব্যাংক খাতে বেশ ভালোই দরপতন হয়েছে। গতি নেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য ও আনুষঙ্গিকের মতো প্রধান খাতগুলোতে। বস্ত্র ও প্রকৌশল চাঙা হলেও তিন দিন বাড়ে তো দুই দিন কমে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত ভালো হবে, এমন প্রত্যাশা ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। আর বাজারে এই অবস্থায় সূচক ছয় হাজার পয়েন্টে ওঠার পর তা ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড একবার নয়, দুবার। সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সূচক পার হয় ছয় হাজার পয়েন্ট।

এই ঘটনাটি এমন একসময় ঘটল, যখন করোনাভাইরাসের কারণে চলছে বিধিনিষেধ। গত ৫ এপ্রিল এই বিধিনিষেধ তথা লকডাউন শুরু হবে ভেবে আতঙ্কে কম দামে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাওয়া বিনিয়োগকারীরা পরের ‍দুই মাসে দেখলেন ভেলকি।

তরতর করে বাড়তে থাকে শেয়ারমূল্য, বাড়ে সূচক, উন্নতি হয় লেনদেনে।

এর মধ্যে গত ৩০ মে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮ পয়েন্ট।

১৭ মে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় দেড় হাজার কোটির ঘর। সেখানেই থেমে থাকেনি পুঁজিবাজার।

১৯ মে লেনদেন ছাড়ায় দুই হাজার কোটি টাকা। এরপর কেবল ছয় দিন এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছে। বাকি সব দিনই দুই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়।

৬ জুন লেনদেন আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় পৌঁছে।

২০১০ সালের জানুয়ারির পর এটাই ছিল সর্বোচ্চ লেনদেন।

তিন দিন পর ৯ জুন লেনদেন ওঠে আরেক উচ্চতায়। সেদিন হাতবদল হয় ২ হাজার ৭০০ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

পুঁজিবাজারে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি লেনদেনের রেকর্ডটি টিকে থাকে কেবল ১০ কোটি টাকার জন্য।

কিন্তু এক দশকের লেনদেনে রেকর্ড ছোঁয়ার দিন সূচক পড়ে যাওয়া নিয়ে ৬ জুন তৈরি হয় অস্বস্তি। কারণ বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রিতে দাম কমে যাওয়ার দিন বিক্রি করার মানে হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা সংশোধনের আশঙ্কা করছেন।

৭ জুন সত্যি সত্যি সূচক কমে ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। সেদিন ৫৩ পয়েন্ট সূচক হারায়।

এরপর অবশ্য প্রতিদিনই সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরেই ছিল। যদিও ১৪ জুন একপর্যায়ে আবার নিচে নেমে যায়। পরে শেষ এক ঘণ্টায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ৬ হাজার ১৩ পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।

এরপর দুই দিন টানা বাড়লেও ছয় হাজার পয়েন্টে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় কাটেনি।

এই এক মাসে পুঁজিবাজার সংশোধনে না গেলেও ব্যাংক খাতে বেশ ভালোই দরপতন হয়েছে। গতি নেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন, খাদ্য ও আনুষঙ্গিকের মতো প্রধান খাতগুলোতে।

বস্ত্র ও প্রকৌশল চাঙা হলেও তিন দিন বাড়ে তো দুই দিন কমে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত ভালো হবে, এমন প্রত্যাশা ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু সেখানেও দুই দিন বাড়লে তিন দিন তা কমে আগের অবস্থানে আসছে।

কেবল বিমা খাত বেড়েই চলছে। থামার নাম নেই এখানে। কেন এই খাতে অস্বাভাবিক উত্থান, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।

এই এক মাসে লেনদেন কত

১৭ মে থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে কর্মদিবস ছিল মোট ২২টি। এই কয়দিনে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

দিনে গড় দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

২০১০ সালের মহাধসের পর এত বেশি লেনদেন কখনো হয়নি পুঁজিবাজারে।

তবু কেন অস্বস্তি

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, বিশেষ করে ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত যে অবমূল্যায়িত, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। নানা সময় উত্থানের আভাস দিয়েও থেমে গেছে খাত দুটি।

আর ব্যাংক খাত ঘুমিয়ে থাকার পর গত জানুয়ারিতে সূচক ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে গিয়েও পরে উল্টো যাত্রায় সওয়ার হয় সূচক।

প্রায় তিন মাস পর ৪ এপ্রিল সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৮ পয়েন্টে। এই কয় দিনে সূচক কমে ৮২১ পয়েন্ট। এই সময়ে সব খাতের শেয়ার দর হারানোয় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

অথচ এই পতন শুরু হওয়ার আগে গত বছরের জুন থেকে টানা বেড়েছিল পুঁজিবাজার। এই সময়ে সূচক বাড়ে প্রায় দেড় হাজার পয়েন্ট।

৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর ১৬ জুন পর্যন্ত সূচক বেড়েছে মোট ৯৬৩ পয়েন্ট। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আলোচনা আছে যে, বাজার সংশোধন হতে পারে।

পুঁজিবাজার কীভাবে আগাবে, তার একটি পূর্বানুমান করা হয় টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস করে। সেখানে ধারণা করা হয়, ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট অতিক্রম করতে পারলে পুঁজিবাজার আরও বাড়বে।

কিন্তু সেই ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টে যেতে পারছে না মূলত ব্যাংকের দরপতনের কারণে।

আবার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মতোই দশা সূচকের। তিন দিন বাড়লে দুই দিন কমে। ফলে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।

কী বলছেন বিশ্লেষকরা

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি সেক্টরের উত্থানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ভালো মুভমেন্টের দিকে নিয়ে গেলে আমি তাকে কীভাবে ভালো বলব?

‘অতিমূল্যায়িত কোম্পানির শেয়ারের দর যদি বাড়তেই থাকে, তাহলে বলতে হবে সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফিলতি আছে।’

গত কয়েক দিনে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতের কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি আর লেনদেনে গতি আসার পর কিছুটা হলেও আশান্বিত হয়েছেন তিনি। তবে এই গতি আর দর ধরে রাখতে না পারার পর আবার আশাহতও হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এমনভাবে যদি অন্তত সব সেক্টরের শেয়ারের দর বাড়ে, তাহলে আমি মনে করি এটি সার্বিক পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। তবে শুধু বিমার মাধ্যমে সূচক ও লেনদেনে উত্থানে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেটি দিয়ে সার্বিক বাজারকে মূল্যায়ন করা কঠিন।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো সেক্টর নিয়ে কারসাজি হলে তার জন্য সার্ভেইল্যান্স আছে। সেটি তদন্ত করার জনবল আছে। তারা সেটি দেখবে। তবে সার্বিক পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান-পতন দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না। লেনদেন ভালো হলেই বুঝতে হবে পুঁজিবাজারে টাকা আছে। এখানে আতঙ্কের কিছু নেই।’

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার এই অবস্থার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সবাই এক খাতের দিকে ছুটছে। যেখানে লাভ পাচ্ছে, সেদিকেই যাচ্ছে।’

‘কিন্তু টানা দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন কি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ছাড়া সম্ভব?’

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আরও বাড়াতে হবে আর সব খাতেই বিনিয়োগ করতে হবে। একটি খাতে বেশি নজর দিলে সেটি অতিমূল্যায়িত হয়ে গেলে তার ফল ভালো হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর