শেয়ারের হিস্যা নিয়ে তথ্য প্রকাশের পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমল। যদিও এদিন এই খাতের বেশিরভাগ শেয়ারের দামই বেড়েছে।
শেয়ারের হিস্যা নিয়ে এই ঘটনার পর বুধবার সকাল ১০টায় লেনদেনের শুরুতেই কোম্পানিটির শেয়ার প্রায় ১০ শতাংশ দাম হারিয়ে ফেলে। আগের দিন ১০৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে দাম ৯৭ টাকায় নেমে আসে। পরে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দাম দাঁড়ায় ১০০ টাকা ১০ পয়সা।
শতকরা হিসেবে দর কমেছে ৬.৯৭ শতাংশ।
তবে দাম কমলেও কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন বেড়েছে। আগের দিন হাতবদল হয় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬১৫টি। আর আজ হাতবদল হয়েছে ২০ লাখ ৬১ হাজার ৩৫১টি।
এটা স্পষ্ট যে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার ছেড়ে দিয়ে নির্ভার হতে চেয়েছেন। তবে েএকে সুযোগ ভেবে আবার কিনেছেন একটি অংশ।
এই কোম্পানির বেশ বড় ধরনের দরপতন হলেও বিমা খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির দরই বেড়েছে। মোট ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ১২টির, আর পাল্টায়নি একটির।
এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে যেসব কোম্পানি, তার মধ্যে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
এদিন সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে বিমা খাতেরই সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স। শেয়ার প্রতি দেড় টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার খবরে কোম্পানিটি দর হারায় ৮.৭ শতাংশ। আগের দিন ১১৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা।
যে গুজব ছড়িয়েছিল
সম্প্রতি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে যে, এই কোম্পানির ১.৯২ শতাংশ শেয়ার কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর এক মাসে কোম্পানির শেয়ারের ২২.১৯ শতাংশ কিনে নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
সে সময় শেয়ারের হিস্যার একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এই খবরে কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা তুঙ্গে উঠে। আর দুই দিনেই দাম বাড়ে ১৭ টাকা ১০ পয়সা।
তবে মঙ্গলবার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনেননি, উল্টো বিক্রি করেছেন হাতের হাতে থাকা অর্ধেক শেয়ার।
এপ্রিল মাস শেষে এই কোম্পানির ১৬.৩৬ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। মে মাস শেষে দাঁড়ায় ৮.০৮ শতাংশ।
অন্যদিকে এপ্রিল শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার ছিল মোট শেয়ারের ২২.১৯ শতাংশ। মে শেষে এই হিস্যা বেড়ে হয়েছে ৩০.৪৫ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে প্রতি মাস শেষে উদ্যোক্তা পরিচালক, সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ারের কত শতাংশ আছে তার হিসাব প্রকাশ করতে হয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই হিসাবে নজর রাখেন বহু বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে অনেক সময় ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারে উৎসাহী হন।
ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি বন্ধে কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই কমিটি শতাধিক ব্যক্তির ওপর নজর রাখছে বলে খবরও এসেছে।
পুঁজিবাজারে গত বছরের জুন থেকেই, বিশেষ করে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। শেয়ারের দামও কোনোটির তিন গুণ, কোনোটির ছয় গুণ, কোনোটির ১০ গুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।
অনেক বেশি দাম বাড়া একটি কোম্পানি হলো ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, যেটির দাম গত কয়েকদিনও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। মোট চার কোটি এক লাখ ২৫ হাজার শেয়ার আছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে মোট শেয়ারের ৬১.৩৫ শতাংশ বা ২ কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৮৭টি।
এই শেয়ার বিক্রি করতে হলে উদ্যোক্তা পরিচালকদের আগাম ঘোষণা দিতে হবে। বাকি শেয়ার যে কেউ ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করতে পারেন। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রিতে ঘোষণা দিতে হয় না।