জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ভ্যাট নিবন্ধনই নেয়নি। তারপরও ৫ মাস ধরে ক্রেতাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নিয়ে সেই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা দল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিজাত রেস্টুরেন্ট টেপটেলস-এ। বুধবার দুপুরে প্রিতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান এ তথ্য জানিয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ৫ মাসে কমপক্ষে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, অভিজাত এই রেস্টুরেন্টটি ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়েই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে আসছিল। ভুয়া চালানে নির্ধারিত ১৫% হারে ভ্যাট আদায় করলেও তা সরকারি কোষাগার জমা করেনি। পাঁচ মাসে আত্মসাৎ করেছে ৩৫ লক্ষ টাকার ভ্যাট। আমাদের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে।’
মইনুল খান জানান, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পিওএস মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন ৬.৩ চালান দেয়ায় ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ করে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারি পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া ৬.৩ চালান ইস্যু করার মাধ্যমে যথারীতি ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দার দল রেস্টুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করে।
গোয়েন্দাদের তদন্তে আরও দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তদন্তে আরও দেখা যায়, প্রতিটি খাবারের বিলে ‘VAT Registration: Applied’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং এতে ১৫% হারে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। অথচ এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেনি রেস্টুরেন্টটি।
টেপটেলস রেস্টুরেন্টের প্রতিটি বিলের রিসিটেই দেখা যাচ্ছে, ভ্যাট হিসেবে ১৫ শতাংশ কাটা হয়েছে
ভ্যাট আইন অনুসারে, যে কোন ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরুর পূর্বেই যথাযথভাবে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং নির্ধারিত ৬.৩ ফরমে ক্রেতাদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে। একই সঙ্গে কর মেয়াদ শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে রিটার্নের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অথচ এই রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ব্যতিরেকে গত ৫ মাস ধরে ব্যবসা করে আসছে এবং নিবন্ধন ব্যতিরেকে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট কর্তন করছে। ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায়কৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমাও করছে না।
মইনুল খান বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুসারে জানুয়ারি/২০২১ থেকে ১৫ জুন/২০২১ পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭ টাকা। যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৫ টাকা।
এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২% হারে সুদ ২ লাখ ৯ হাজার ৭৪৫ টাকা প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, তদন্তকালে আরও দেখা যায় যে খাবারের বিলে ‘Vat Registration: Applied’ লেখা থাকলেও স্থানীয় ভ্যাট অফিসে এমন আবেদন পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের জিএম মো. আনিস গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানান, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনো কাগজপত্র সংগ্রহ করছে। ভ্যাট নিবন্ধন নেই, কিন্তু ক্রেতাদের নিকট বিলের মাধ্যমে কেন ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে —এমন প্রশ্নের সন্তোসজনক জবাব দিতে পারেনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ।
ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায়কৃত ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর বুধবার ভ্যাট আইনে মামলা করেছে বলে মইনুল জানান।
‘আত্মসাৎকৃত ভ্যাট আদায় ও এসংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানা আরোপ করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।’