দেশ থেকে অর্থ পাচার নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে যখন ব্যাপক সমালোচার ঝড় উঠেছে, তখন পাচাররোধে কঠোর অবস্থানের কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছেন, ‘দেশে একটি গ্রুপ আছে যারা লোভে পড়ে দেশ থেকে টাকা পাচার করছে। আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’
‘এ জন্য বিদ্যমান আইনের কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন করা হচ্ছে। কিছু নতুন আইনও করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে পাচারকারীদের ধরা সহজ হবে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া যাবে।’
অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিরি বৈঠক শেষে বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ সব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
সংসদের চলতি বাজেট অধিবেশনে অর্থপাচার নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা। খোদ সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাও অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়া জানান। এ নিয়ে নিজের অসাহয়ত্বের কথা প্রকাশ করেন মুস্তফা কামাল, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
বৈঠকে শেষে সাংবাদিকরা অর্থপাচার বিষয়ে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু নতুন আইন করা হবে। আর কিছু সংশোধন করা হবে। অর্থপাচার নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিক) যেমন মনে কষ্ট আছে। আমারও লাগে। এ জন্য আমাদের পদ্বতির (সিস্টেম) উন্নতি করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’
দেশে থেকে টাকা পাচারের ঘটনা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা অনেক বেড়েছ। এটা নিয়ে সরকার যেমন উদ্ধিগ্ন, তেমনি বিব্রতও।
গত বছরের নভেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে দেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচার করেছে, এমন ২৮ জনের একটি তালিকা সরকারের হাতে আছে বলে জানানোর পর দেয়ার পর দেশ জুড়ে তুমুল বির্তকের সৃষ্টি হয়।
তিনি কারো নাম প্রকাশ না করলেও তালিকায় বেশিরভাগই রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পাচার শুধু কানাডায় নয়, মালয়েশিয়াতে হচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক পর্যায়ে উচ্চ আদালত ওই সব পাচারকারীদের নাম চেয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন দুনীর্তি দমন কমিশনকে (দুদক)। দায়সারা গোছের প্রতিবেদন দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। পাচারকারিদের তালিকা সরকার আদৌ করেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
দেশ থেকে প্রতি বছর কী পরিমান টাকা বের হয়ে যাচ্ছে তার কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই পাচারের ৮০ শতাংশই গেছে বাণিজ্যের অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানির আড়ালে আন্ডার এবং ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অনেক দেশ অর্থ পাচাররোধে আইন কঠোর করলেও বাংলাদেশে প্রচলিত আইনগুলো খুবই দুর্বল। যে কারণে পাচারকারীদের সহজে ধরা যায় না।
অর্থমন্ত্রী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যদি সিস্টেমের ডেভলপ করতে পারি, তাহলে কারা টাকা পাচার করছে তাদের শনাক্ত করতে পারব। এ জন্য যেখানে দরকার সেখানে আইন সংশোধন করা হবে। আবার কিছু নতুন আইন করা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, আগে আমাদের বৈদেশিক লেনদেন হতো ম্যানুয়াল পদ্বতিতে। এখন ডিজিটালে হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আইন আরও কঠোর করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকলে, রিটার্ন ভালো হলে দেশ থেকে টাকা পাচার কমবে। এ জন্য সিস্টেমের উন্নতি করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী আরও জানান, ‘দেশের কিছু লোভী লোক আছে। এই গ্রুপটি টাকা পাচার করছে। এদের শনাক্ত করতে হলে আইন-কানুনের সংশোধন দরকার। আমরা সেই উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছি।’
খেলাপি ঋণ বাড়েনি
করোনাকালে ব্যবসায়ীদের কিস্তি পরিশোধে নানাভাবে ছাড় দেয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেনি । বরং বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে ( জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত) দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরমিাণ ৬ হাজার ৩ ৫১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে এই হিসাব করেছে তাদের থেকে তথ্য নিয়ে আমি দেখব। তার পর এর জবাব দেব।’