বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের হিসাব নিয়ে ‘নজিরবিহীন কারসাজি’

  •    
  • ১৫ জুন, ২০২১ ২১:৪৬

পুঁজিবাজারে প্রতি মাস শেষে উদ্যোক্তা পরিচালক, সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ারের কত শতাংশ আছে তার হিসাব প্রকাশ করতে হয়। গত কয়েক দিনে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, মে মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা কোম্পানিটির ২০.২৭ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তবে আনুষ্ঠানিক হিসাব প্রকাশের পরে জানা যায়, এই মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ারের ৮.২৮ শতাংশ বিক্রি করেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কার কাছে কী পরিমাণে আছে, তার হিসাব প্রকাশ নিয়ে নজিরবিহীন একটি ঘটনা ঘটেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজে গত দুই দিনে ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, এই কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ কিনে নিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর সাধারণ মানুষের হাতে আছে কেবল ১.৯২ শতাংশ।

এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত দুই দিনে শেয়ারটি নিয়ে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়। তবে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে যে হিসাব প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যায়, গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আসলে শেয়ার বিক্রি করেছেন বেশি, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ার কিনেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক সময়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি বন্ধে কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এই কমিটি শতাধিক ব্যক্তির ওপর নজর রাখছে বলে খবরও এসেছে।

পুঁজিবাজারে প্রতি মাস শেষে উদ্যোক্তা পরিচালক, সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ারের কত শতাংশ আছে তার হিসাব প্রকাশ করতে হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই হিসাবে নজর রাখেন বহু বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে অনেক সময় ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সেই শেয়ারে উৎসাহী হন।

পুঁজিবাজারে গত বছরের জুন থেকেই, বিশেষ করে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। শেয়ারের দামও কোনোটির তিন গুণ, কোনোটির ছয় গুণ, কোনোটির ১০ গুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।

অনেক বেশি দাম বাড়া একটি কোম্পানি হলো ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, যেটির দাম গত কয়েকদিনও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে মে মাস শেষে এই কোম্পানির শেয়ারের হিস্যা নিয়ে হিসাব প্রকাশ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে তার আগে কয়েকদিন ধরেই একটি চার্ট ছড়িয়ে পড়ে অনলাইনে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের হিস্যা নিয়ে কারসাজির স্কিনশট

সেখানে দেখানো হয়, ৩০ এপ্রিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ২২.১৯ শতাংশ শেয়ার। আর ৩১ মে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১.৯২ শতাংশ।

অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এপ্রিল শেষে শেয়ার ছিল ১৬.৩৫ শতাংশ। আর মে শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৬২ শতাংশ।

বলা হয়েছে, এক মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের কাছে থাকা মোট শেয়ারের ২০.২৭ শতাংশ বিক্রি করেছেন, যার পুরোটাই কিনেছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে উল্টো কথা। এখানে বলা আছে, ৩১ মে শেষে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে মোট শেয়ারের ৩০.৪৫ শতাংশ, যেখানে এপ্রিলে ছিল ২২.১৯ শতাংশ।

একইভাবে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে মে মাস শেষে ছিল ৮.০৮ শতাংশ, আর এপ্রিলে ছিল ১৬.৩৬ শতাংশ।

ছড়িয়ে পড়া স্কিনশটে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার কিনে নিচ্ছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা

এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করেছেন ৮.২৮ শতাংশ শেয়ার, যার ৮.২৬ শতাংশ কিনেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকিটা কিনেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এটা বোঝা যায় যে, অপপ্রচারের উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে, কোম্পানিটি আগামীতে আরও ভালো করবে। এর মাধ্যমে একটি কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা হয়।

গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫২ শতাংশের বেশি। গত দুই দিনে কোম্পানির শেয়ারের দর ১৭ টাকা ১০ পয়সা বেড়েছে।

মঙ্গলবার লেনদেন হয় ১০৭ টাকা ৬০ পয়সায়। অবশ্য গত ৮ জুন সর্বোচ্চ দাম উঠে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর তা সংশোধন হয়ে ৯০ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা এখন জানলাম। যাচাই-বাছাই করে দেখব।’

বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে কমিশনের মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা কিছুই আসুক না কেন, ডিএসইর ওয়েবসাইট সবার জন্য উন্মুক্ত। সেখানে যে কেউ এসব গুজব যাচাই করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের বলব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য দেখেই বিনিয়োগ না করে, সঠিক তথ্য যাচাই করে বিনিয়োগ করুন।’

তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্য তথ্য প্রচার করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে। সময় সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। মোট চার কোটি এক লাখ ২৫ হাজার শেয়ার আছে কোম্পানিটির। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে মোট শেয়ারের ৬১.৩৫ শতাংশ বা ২ কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৮৭টি।

এই শেয়ার বিক্রি করতে হলে উদ্যোক্তা পরিচালকদের আগাম ঘোষণা দিতে হবে। বাকি শেয়ার যে কেউ ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করতে পারেন। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রিতে ঘোষণা দিতে হয় না।

এ বিভাগের আরো খবর