গত কয়েক দিন ধরে বিমা খাতের রাজত্ব কমলেও আবারও আগের জায়গায় ফিরছে পুঁজিবাজারের দাপুটে এই খাত। সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল বিমা। সোমবারও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
বিমা খাতের শেয়ারের দর যখন কমছিল, তখন আলোচনায় ছিল এ খাতের মূল্য সংশোধনের। গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে ধাপে ধাপে বাড়তে থাকা বিমা কোম্পানির শেয়ার দর। যখন আকাশচুম্বী তখন দর কমে আসাকেই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়েছিল।
কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুতে আবারও যখন বিমা খাতের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে, তখন আলোচনা অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনে কতটা ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন শেয়ারধারীরা।
গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে ব্যাংক ও বিমা খাতের সমানভাবে দর পতন হলেও চলতি সপ্তাহে বিমার শেয়ার দর ঘুরে দাঁড়ালেও পতনেই আছে ব্যাংক খাত।
মঙ্গলবার লেনদেন শেষে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির। কমেছে মাত্র ১০টির। আর দর পাল্টায়নি দুটির।
অপরদিকে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ২২ ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে। পাঁচটির দর বেড়েছে। আর চারটির দর পাল্টায়নি।
এ সময়ে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল বস্ত্র, প্রকৌশল ও জ্বালানি খাতের।
এদিন বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির। কমেছে ২১টির। দর পাল্টায়নি পাঁচটির। এ ছাড়া প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ১৯টির দর বেড়েছে। ২০টির দর কমেছে। দর পাল্টায়নি তিনটির।
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের স্যালভো কেমিক্যাল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ ছাড়া বিদ্যুও জ্বালানি খাতের কোম্পানির এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের শেয়ার দরও বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ খাতের আরেক কোম্পানি অ্যাসোসিয়েট অক্সিজের শেয়ার দরও বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়েছে প্রকৌশল খাতের এস আলম কোল্ট রোলিং স্টিল লিমিটেডের।
এদিক চলতি মাসের ১১ কার্যদিবস শেষ টানা নয় কার্যদিবসই পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ছয় হাজার পয়েন্টে।
জুন মাসের শুরুতে সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৯৩ পয়েন্টে। এরপর টানা তিন দিন ছয় হাজারে ছিল সূচক। ৭ জুন আবার ছয় হাজার থেকে নেমে সূচক দাঁড়ায় ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে। এরপর ছয় কার্যদিবস লেনদেনে টানা সূচকের অবস্থান ছিল ছয় হাজারে।
আস্থা বিমায়
দীর্ঘ প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাড়তে থাকা বিমা খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও অনড়। বিনিয়োগ করছেন শুধু এ খাতের। মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১২টি ছিল বিমা খাতের।
এদিন লেনদেনে বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ৯.৯৬ শতাংশ। শেয়ার দর ১১৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২৮ টাকা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ। শেয়ার দর ৯৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা ৬০ পয়সা। ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দরও বেড়েছে একই হারে। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯.৯০ শতাংশ বেড়ে ৬০ টাকা ৬০ পয়সার শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৬৬ টাকা ৬০ পয়সা।
প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৪১ শতাংশ। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.১২ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৭৮ শতাংশ। প্রভাতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৪০ শতাংশ। এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.০৮ শতাংশ।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এদিন বিমা খাতের কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ১.৬২ শতাংশ।
ব্যাংকের আগ্রহ তলানিতে
মঙ্গলবার লেনদেন শেষে তলানিতে ছিল ব্যাংক খাতের শেয়ার দর। কমেছে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। এদিন ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে রূপালী ব্যাংকের ৪.০৫ শতাংশ। এরপর ৩.২৮ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে ট্রাস্ট ব্যাংকের। ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে দশমিক ৭২ শতাংশ।
দর বাড়ার তালিকায় ব্যাংকের নাম না থাকলেও পতনে তালিকায় সারি সারি আছে ব্যাংকের নাম। মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের ৪.২৩ শতাংশ। ডাচ বাংলা ব্যাংকের দর কমেছে ৩.৭০ শতাংশ। এবি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩.৬৭ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩.৬৫ শতাংশ। প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২.৩৮ শতাংশ।
স্ট্রান্ডার্ড ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত।
বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতের ছিল উত্থান
প্রকৌশল খাতের এস আলম কোল্ড রোলিং স্টিল লিমিটেডের শেয়ারের দর বেড়েছে ৯.৯৭ শতাংশ। শেয়ার দর ৩২ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা। এ খাতের মীর আক্তার হোসেনের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ। লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১০১ টাকা ৮০ পয়সা।
প্রকৌশল খাতের আরেক কোম্পানি রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮৫ শতাংশ। ডমিনেস স্টিল বিল্ডিংসিস্টেমস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৬৫ শতাংশ।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি মুন্নু ফেবিক্স লিমিটেডের। দ্বিতীয় দিনের মতো কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ। একইভাবে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফেরা তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শেয়ার দরও বেড়েছে ৯.৬৬ শতাংশ।
এ খাতের আরেক কোম্পানিট তুং হাই নীটং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৭৬ শতাংশ। সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৫২ শতাংশ। তোসরিফা ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.১৯ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৬ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের চেয়ে ১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৪ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি টাকা।