বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উন্নয়নে বাংলাদেশের কাছে শিক্ষা নিতে পারে ভারত-পাকিস্তান

  •    
  • ১৫ জুন, ২০২১ ১২:০৪

সুব্রামানিয়ামের নিবন্ধে উঠে আসে বাংলাদেশের সামাজিক সূচকে উন্নতির বিষয়টি। তিনি লেখেন, ‘এর চেয়েও লক্ষণীয় বিষয় হলো, দেশটির সামাজিক সূচকের উন্নতি। যেমন: গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ব্যাপকভাবে নারী শ্রমশক্তির উত্থান। এগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছে।’

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের উজ্জ্বল মডেল। ভারত ও পাকিস্তানের জন্য মডেল হতে পারে দেশটি। ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে উন্নয়ন করেছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। সবার চোখে পড়ার মতো।

এই মন্তব্য বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী, রাজনীতিক, কলামিস্ট বা অর্থনীতিবিদের নয়; ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামের।

প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে লেখা এক নিবন্ধে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা নিয়ে মুগ্ধ হয়ে এ মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বিশ্লেষণ ও মতামতভিত্তিক ওয়েবসাইট প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে ১১ জুন অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামের নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে। সাইটটিতে বিশ্বের খ্যাতিমান লেখকেরা লিখে থাকেন।

নিবন্ধে অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম লিখেন, “একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বছরের পর বছর ধরে বিদেশি সহায়তা ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল এবং উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের বসবাসের কারণে একটি গরিব দেশ হিসেবেই এত দিন বাংলাদেশকে জেনে এসেছি। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের প্রথম উপন্যাস ‘ইন দ্য লাইট অব হোয়াট উই নো’ উপন্যাস পড়ে বাংলাদেশকে ‘দুঃখের ঝুঁড়ির দেশ’ দেশ হিসেবেই জেনেছি।

“কিন্তু সেই বাংলাদেশ এখন আর সেই বাংলাদেশ নেই। স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশ এখন অতি দ্রুত বিকাশমান একটি দেশ হিসেবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা বিস্ময়, অলৌকিক ঘটনা মনে হচ্ছে আমার কাছে।”

স্বাধীনতার পর কৃষিতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তিনি লেখেন, ‘এই সময়ে বাংলাদেশের অর্জনগুলো চোখে পড়ার মতো। দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার নাটকীয় উন্নতি হয়েছে; ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ছিল পাকিস্তানের অর্ধেক। ২০০৭ সালে ছিল ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ।

‘কিন্তু এখন গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনৈতিক সূচকে দুই দেশকেই পেছনে ফেলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। দেশটির প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।’

পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা করেছেন সুব্রামানিয়াম। ফাইল ছবি

সুব্রামানিয়ামের নিবন্ধে উঠে আসে বাংলাদেশের সামাজিক সূচকে উন্নতির বিষয়টি। তিনি লেখেন, ‘এর চেয়েও লক্ষণীয় বিষয় হলো, দেশটির সামাজিক সূচকের উন্নতি। যেমন: গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ব্যাপকভাবে নারী শ্রমশক্তির উত্থান।

‘এগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অবদান রেখেছে। তবে এই উন্নতির পথে আরেকটি বিষয় সমানভাবে কাজ করেছে। আর সেটি হচ্ছে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে রেখে দেশটিতে একটি গণতান্ত্রিক স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা।’

নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পাঠ এ কারণে কৌতূহলোদ্দীপক যে জনগণের কাছে শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করতে রাষ্ট্র যেখানে জরুরি নাগরিক সেবা নিজেরা দিতে চায়, বাংলাদেশ সেখানে এ দায়িত্ব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়েও নিশ্চিন্ত থেকেছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, আর্থিক সেবা—সবখানেই এনজিওর অবাধ বিচরণ। এরা মহিরুহ আকার ধারণ করলেও রাষ্ট্র তাতে নিরাপত্তাহীন বোধ করেনি। এটা একটা বিশেষ দিক বলেই মনে করেন অরবিন্দ।’

স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিককার প্রসঙ্গ টেনে সুব্রামানিয়াম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ এত দরিদ্র ছিল যে রাষ্ট্রের পক্ষে অনেক সেবা সরাসরি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণে অন্যদের এগিয়ে আসাটাই ছিল স্বাভাবিক। ফলে দেখা গেছে, এনজিওগুলো বিপুল বিদেশি সহায়তা পেয়েছে, ২০০০ সাল পর্যন্ত যা ছিল বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মতো।’

তবে এর মধ্যে আরও গভীর কিছু কারণ থাকতে পারে বলেই বিশ্বাস অরবিন্দ সুব্রামানিয়ামের।

তিনি লেখেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে। কর আদায় করার একটা রাজনৈতিক দিক আছে। কাজটি যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তাই সরকার সেই পথে না গিয়ে সামাজিক সেবার দায়িত্ব এনজিওদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল।

সুব্রামানিয়ামের মতে, যেখানে পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র, ভারত দোলায়মান, সেখানে বাংলাদেশ উড়াল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পাইলিং উদ্বোধনের পাঁচ বছরের মাথায় গত ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হয়। ছবি: নিউজবাংলা

অরবিন্দ নিবন্ধে আরও লিখেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেকটি কারণ হচ্ছে রপ্তানি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। পোশাক খাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের যে ক্ষমতায়ন হয়েছে, তা অনেক অর্থনীতিবিদই তুলে এনেছেন।’

তবে এর মধ্যে একধরনের আপাত স্ববিরোধ আছে বলেই মনে করেন অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম। তিনি বলেন, ‘সাধারণত দেখা যায়, যেসব দেশ অনেক বৈদেশিক সহায়তা পায়, তাদের মুদ্রার বিনিময় হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে। ফলে রপ্তানিতে তারা খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে পারে না।

‘কিন্তু বাংলাদেশ সেই ধারাও যেন অগ্রাহ্য করেছে। এ ছাড়া সস্তা শ্রমের আধিক্য এবং উন্নত দেশের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার বাংলাদেশকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’

তবে অতিমাত্রায় এনজিও-নির্ভরতার কিছু বিপদও আছে বলে মনে করেন অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম। তার মতে, রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি রাজনীতিতে প্রবেশ করলে বিদ্যমান ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। তখন রাষ্ট্রকে সেবাদানের ক্ষেত্রে আরও একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করতে হবে। তখন রাজস্ব বৃদ্ধির কঠিন খেলায় নামতে হবে।

অন্যদিকে মজুরি বাড়ানো, আন্তর্জাতিক শ্রমবিধি পালন ও অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা হারানোর কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হ্র্রাস পেতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য আরেকটি মাথাব্যথার কারণ।

‘তবে আজন্ম এই লড়াই করতে করতে বাংলাদেশ অনেক কিছু শিখেছে’, লিখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ একবার ধর্মীয় কারণে বৃহত্তর ভারত থেকে বেরিয়ে আসে ১৯৪৭ সালে। এরপর ১৯৭১ সালে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক কারণে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। অনেক দিন তারা ভারত ও পাকিস্তানের উপহাসের পাত্র ছিল। কিন্তু সেই দিন আর নেই।

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের এক চকচকে মডেল। যে সাফল্যের চূড়ায় বাংলাদেশ এখন আছে, তাতে ভারত ও পাকিস্তানের জন্য মডেল হতে পারে দেশটি।

এ বিভাগের আরো খবর