বাংলাদেশের মানুষের সাহস ও সম্পদের অভাব না থাকলেও মাঝে মাঝে সততা ও দায়বদ্ধাতর আভাব দেখা যায় বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
রোববার পায়রাবন্দর সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের ড্রেজিং বিষয়ে বেলজিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দেশের ক্রমবর্ধমান রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগ আনার পদক্ষেপ হিসাবে গঠিত তহবিল থেকে এ চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের অর্থায়ন করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেদের বুভুক্ষু জাতি মনে করি। কিন্তু না, আমাদের সম্পদ আছে। সম্পদের কোনো অভাব নেই। যেটার অভাব মাঝে মাঝে দেখা যায়, সেটি হচ্ছে- সততা, দায়বদ্ধতা, কখনো জাতির প্রতি দায়িত্বশীলতার।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটির দিকে তাকাতে হবে। নিজেদের নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড় সবই নিজেদের আয়ত্তে আনতে হবে। বহিরাগত চিন্তার দরকার নেই। পদ্মা সেতুর ব্যাপারে তা দেখলেন প্রধানমন্ত্রী, উই ক্যান (আমরা পারি)।
‘আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে (মন্ত্রী হিসাবে) কাজ করি প্রায় আড়াই বছর হলো। সম্পদের অভাব কোথাও আমি ফিল (অনুভব) করিনি। আমাদের সাহস আছে, সম্পদও আছে। আমরা অনেকে এটা বুঝি না। তবে, আমরা বিশাল মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এ অবস্থার পরিবর্তন হবে।’
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রথম বারের মতো অর্থায়ন হয়েছে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেনটেনেন্স ড্রেজিং’ প্রকল্পে।
প্রকল্পের আওতায় বেলজিয়াম-ভিত্তিক ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুলের (জেডিএন) সঙ্গে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার একটি চুক্তি সই হয়েছে।
রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চুক্তিতে সই করেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কল্লোল এবং জেডিএন-এর পক্ষে প্রকল্প পরিচালক জ্যাং ওয়েল।
চুক্তি অনুসারে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেলটি ৩৪ মাসের মধ্যে ড্রেজিং করবে জেডিএন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহম্মদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জ্বল হোসেন ভুইয়া। সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন সচিব মেজবাউদ্দিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডোর হুমায়ুন কল্লোল।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রিজার্ভের অর্থে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্প প্রথম বাস্তবায়ন হবে। এটি ঐতিহাসিক বিষয়। এই বন্দরটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর দিকে কাজ গুরুত্ব দেয়া হবে।’
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ১৫ মার্চ ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ তহবিলটির উদ্বোধন করেন। এই তহবিলের প্রথম গ্রাহক হিসেবে পায়রা বন্দরে ড্রেজিং করতে অর্থায়নের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ড্রেজিং কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রায় ৫৩ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।
পটুয়াখালীর আন্দারমানিক নদীর তীরে রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দরটি অবস্থিত। নিরবচ্ছিন্নভাবে জাহাজ চলাচলের জন্য বর্তমানে চ্যানেলে মেইন্টেন্যান্স ড্রেজিং চালু রয়েছে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্দরে অধিকতর বড় জাহাজ ভিড়ানোর জন্য নিয়মিত ড্রেজিং করা হবে।
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে এ বন্দরে ৪০ হাজার টন কার্গোবাহী এবং ৩ হাজার টিইইউর জাহাজ বন্দরে সরাসরি ভিড়তে সক্ষম হবে বলে মনে করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পায়রা বন্দরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্টে বন্দরটিতে জাহাজ চলাচলের উদ্বোধনও করেন তিনি।