টেক জায়ান্ট গুগল ও অ্যামাজনের পর এবার বিশ্বের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক বাংলাদেশে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি রোববার ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) নেয়, যা ভ্যাট নিবন্ধন হিসেবে পরিচিত।
এর আগে ২৩ মে গুগল এবং ২৭ মে আমাজন ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছিল। এখন থেকে বাংলাদেশ সরকারকে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করবে এবং ভ্যাটের অর্থ পরিশোধ করবে।
ভ্যাট নিবন্ধনে আয়ারল্যান্ডের ঠিকানা ব্যবহার করেছে ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে: ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড, ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল ও ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমিলা সরকার বলেন, রোববার ফেসবুকের তিনটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের এজেন্ট ভ্যাট নম্বর ১০০০০৪।
এর আগে ফেসবুক স্থানীয় অথরাইজ সেলস পার্টনার (এএসপি) এর মাধ্যমে ভ্যাট প্রদান করত বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনাটের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে ফেসবুকের ভ্যাট সংক্রান্ত কার্যক্রমের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি (প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপার)।
গুগল, আমাজন, ফেসবুকসহ অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো (যাদের এ দেশে স্থায়ী কার্যালয় নেই) এ দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নিজেদের নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখেন। ভ্যাট কেটে না রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাঠানোর অনুমতি দেয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর আগে ২০১৯ সালের ২৬ জুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায়ের জন্য বাংলাদেশে ফেইসবুক, গুগল ও ইউটিউবের মতো ইন্টারনেট সেবা এবং বেতার-টেলিভিশনে সম্প্রচার সেবাদাতা অনাবাসীদেরকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে বলে সার্কুলার জারি করে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ অনুযায়ী করযোগ্য আমদানি ও করযোগ্য সরবরাহের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক কাটা হবে।
এর আগে হাই কোর্টের এক আদেশে ওই বছরের ২২ জানুয়ারি গুগল, ফেইসবুক, ইউটিউবের মতো ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ থেকে দেয়া বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয় এনবিআর।
ওই চিঠিতে ফেইসবুক ও ইউটিউবের মতো ইন্টারনেট যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনদাতারা যে অর্থ পরিশোধ করেন, তা থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে সরকারি কোষাগারে জমা করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়।
ফেসবুক-ইউটিউবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বিজ্ঞাপনের অর্থের বেশির ভাগই অবৈধ পথে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি করা হচ্ছিল। ফলে এ খাত থেকে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলাদেশ। এই অর্থ সরকারি কোষাগারে আনতে অনেক দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে এনবিআর।