মুনাফায় ফেরার পাশাপাশি সুশাসনে উন্নতি করায় ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেট থেকে মূল বাজারে ফিরেই চার কোম্পানি করল বাজিমাত। চারটি কোম্পানির দামই বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই।
তবে এই বাড়তি দামেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে পারেননি। কারণ, বিক্রেতা ছিল না।
চার কোম্পানি হলো তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এবং মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড।
চারটি কোম্পানিই জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করেছে।
এদের মধ্যে ১০ শতাংশ বেশি দরে মুন্নু ফেব্রিকের ১০ টাকার শেয়ার ১১ টাকায় বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৫০১টি। তবে এই পরিমাণ শেয়ারও বিক্রি হয়নি অন্য তিন কোম্পানির।
ওটিসি মার্কেটে মনোস্পুলের শেয়ারের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। বেড়ে হওয়ার সুযোগ ছিল ৫৫ টাকা। এই দরে শেয়ার কেনার আদেশ ছিল লাখ লাখ। কিন্তু দুটি শেয়ার বিক্রি হওয়ার পর কেউ আর বিক্রি করেননি।
তমিজউদ্দিনের শেয়ারের মূল্য ছিল ১২ টাকা। ১০ শতাংশ দাম বেড়ে হওয়ার সুযোগ ছিল ১৩ টাকা ২০ পয়সা। এই দামে বিপুল পরিমাণ ক্রেতা থাকলেও বিক্রি হয়েছে কেবল একটি শেয়ার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন দেখছেন বিনিয়োগকারীরাপেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ার ১৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা। এই দরে হাতবদল হয়েছে কেবল একটি শেয়ার।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৬০তম কমিশন সভায় কোম্পানিগুলোকে মূল মার্কেটে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি।
সিদ্ধান্তের চার মাস পর কোম্পানিগুলো রোববার থেকে মূল মার্কেটে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কার আয় কত
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড রোববার তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। যেখানে জানুয়ারি থেকে মার্চ ‘২১ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৪ পয়সা।
মুন্নু ফেব্রিক্সও ওটিসি থেকে ফিরে তাদের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ করেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ পয়সা।
দুই বছর ধরে মুনাফায় কোম্পানিটি। ২০১৯-২০ সালে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১১ পয়সা। আগের অর্থবছরের যা ছিল ৫ পয়সা। মুন্নু ফেব্রিক্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৬ সালে।
- আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে থাকছে না ওটিসি মার্কেট
মনোস্পুল পেপারও রোববার লেনদেন শুরুর দিন আর্থিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩৭ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৮ পয়সা।
তমিজউদ্দিন তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাবে জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ ’২১ সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১১ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৯৮ পয়সা।
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর প্রাথমিক অবস্থা বিবেচনা করে ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন এখানে ভালো করলে ক্যাটাগরিভিত্তিক উন্নতি হবে।’
ওটিসি মার্কেট কী
উৎপাদনে না থাকা, নিয়মিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, কাগজের শেয়ার রাখা, নিয়ম অনুযায়ী বিএসইসিতে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেয়া, লভ্যাংশ প্রদান ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন না করা প্রায় ৬৬টি কোম্পানিকে মূল মার্কেট থেকে সরিয়ে ওটিসি মার্কেটে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম জানিয়েছেন, তারা ওটিসি মার্কেট রাখবেন নাএমন কোম্পানিগুলোকে নিয়ে ২০০৯ সালে এই ওটিসি মার্কেট গঠন করা হয়।
কোম্পানির সুশাসনে উন্নতি করে এর আগে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়াটা ক্যমিকেল, সোনালি পেপার ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ মূল মার্কেটে ফিরেছে।
ওটিসি মার্কেটই থাকছে না
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তারা ওটিসি মার্কেট রাখবেন না।
এই মার্কেটে এখনও কোম্পানি আছে ৫৮টিল। এর মধ্যে ১৫টি যাচ্ছে এসএমই বোর্ড বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানি জন্য তৈরি করা বোর্ডে।
৩০টি কোম্পানি যাচ্ছে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবিতে)। বিভিন্ন ধরনের বন্ড, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির সিকিউরিটিজ ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেনের জন্য এটি তৈরি করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
আর ১৩টি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির আবেদন করেছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানিকে বাজারে রাখার চেষ্টা করছে বিএসইসি।
চারটিকে তালিকাচ্যুতির কাজ শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।
এসব কোম্পানি যে জনগণের কাছ থেকে টাকা তুলে তা আত্মসাৎ করেছে, তার কী হবে- এমন প্রশ্নে বিএসইসির চেয়ারম্যান সম্প্রতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা টাকা উঠিয়ে চলে গেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করব।’