মুদ্রাস্ফীতি অপ্রত্যাশিত রূপ নেয়ায় আগামী কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ব্যাপক বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণের দাম প্রতিদিনই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে দেশটির স্বর্ণ খাত ১৩ বছরের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ বার্ষিক দরবৃদ্ধি দেখতে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুবাইভিত্তিক দৈনিক খলিজ টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে ভোক্তা পর্যায়ের সূচকে (সিপিআই) স্বর্ণের মূল্য বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
এর আগে এপ্রিলে এ সূচক বৃদ্ধির হার ছিল শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০০৯ সালের জুনের পর সর্বোচ্চ।
দুবাইয়ের আর্থিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান সেঞ্চুরি ফাইন্যান্সিয়ালের বিনিয়োগবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা বিজয় ভালেচা বলেন, ‘সিপিআই সূচকে প্রত্যাশার বিপরীত ধারার মধ্যেই গত সপ্তাহে স্বর্ণের দামে মিশ্র প্রবণতা ছিল। অর্থাৎ কিছু দেশে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও অনেক জায়গায় ছিল নিম্নমুখী।
‘মুদ্রাস্ফীতির বিপরীতে অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণ। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি কল্পনার চেয়েও বেশি বাড়ছে বলে তথ্য পাচ্ছি আমরা। এ কারণেই স্বর্ণের দাম বাড়ছে এবং এটি সুখবর।’
বিজয় ভালেচা আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলে ১ হাজার ৮৪৫ থেকে ১ হাজার ৮৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে স্বর্ণের দাম, যা ১ হাজার ৯১০ ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছি আমরা।’
দুবাইয়ে অনেক মূল্যের এ ধাতুর দর ১ দশমিক ১২ শতাংশ কমে শুক্রবার আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৮৭৬ দশমিক ৮৭ ডলারে পৌঁছায়। আউন্সপ্রতি দাম কমে ২১ দশমিক ২১ ডলার।
দুবাই গোল্ড অ্যান্ড জুয়েলারি গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি গ্রাম বিক্রি হয়েছে ২২৭ দশমিক ৫ দিরহামে। ২২ ক্যারেট ২১৩ দশমিক ৭৫ দিরহামে, ২১ ক্যারেট ২০৪ দিরহামে এবং ১৮ ক্যারেট ১৭৪ দশমিক ৭৫ দিরহামে বিক্রি হয়।
দুবাইসহ পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম কমে গ্রামপ্রতি গড়ে ২২৭ দশমিক ৫ দিরহাম হয়েছে।
ভালেচা বলেন, এখন পর্যন্ত ২২৪ দিরহামের কমে এ দর নামেনি। আগামী সপ্তাহেই এ দাম লাফিয়ে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরএম ক্যাপিটাল অ্যানালিটিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক রাশেদ হাজিয়েভের মতে, স্বর্ণের দাম এরই মধ্যে বেড়ে ১ হাজার ৮৫৫ থেকে ১ হাজার ৮৭০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে।
দ্রুতই এ দাম ১ হাজার ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৯৭৫ ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।
গত বছরের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বড় ধরনের সংটের আশঙ্কায় চীনসহ বিভিন্ন দেশের বায়াররা স্বর্ণ কিনে মজুত রাখতে শুরু করে।
চাহিদা বাড়ায় সে সময় স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্পট গোল্ড ২ হাজার ৬৩ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়। পরে অবশ্য তা কমে আসে।
বাংলাদেশের বাজারে সর্বশেষ স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয় গত ২৩ মে। সে সময় সব ধরনের স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৪১ টাকা করে বাড়ানো হয়।
সে অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ৭৩ হাজার ৪৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার ৩৩৪ টাকায়। ১৮ ক্যারেটের দাম ৬১ হাজার ৫৮৬ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৫১ হাজার ২৬৩ টাকা।
তার ১২ দিন আগে ১০ মে স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ানো হয় বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
গত বছরের আগস্টে দেশের বাজারে স্বর্ণের ভরি ৭৭ হাজার ২১৬ টাকায় উঠেছিল, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে স্থানীয় বাজারেও স্বর্ণের দাম ওঠানামা করেছে।