বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুদহার কমার পরও ব্যাংকের মুনাফা বাড়ল যেভাবে

  •    
  • ১৩ জুন, ২০২১ ০৮:৩৫

সবশেষ হিসাব অনুযায়ী আমানত আর ঋণের সুদহারের পার্থক্য ৩ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংক সুদ বাবদ ৪ টাকা ৩৬ পয়সা ব্যয় করে এই পরিমাণ আয় করেছে। সর্বোচ্চ সুদহার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ থাকার সময় এই ৩ টাকা সুদ আয় করতে ব্যাংকের সুদব্যয় ছিল ৯ টাকার বেশি।

ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার দুই অঙ্কের নিচে নেমে আসার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ঘটেছে উল্টোটা। ব্যাংকগুলো এখন অপেক্ষাকৃত কম খরচ করে মুনাফা করতে পারছে বেশি।

কয়েক বছর চেষ্টার পর গত বছরের এপ্রিল থেকে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ আর ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ঠিক হয় ৯ শতাংশ।

শুরুতে ব্যাংকগুলো বলছিল, এই সুদহার কার্যকর করা কঠিন হবে। তবে এক বছর পর দেখা যাচ্ছে ঋণের গড় সুদহার এখন ৮ শতাংশেরও কম। আর এটিও কমে আসছে। ফলে আমানতের ৬ শতাংশ সুদও আর পাওয়া যাচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আমানতে সুদ ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।

ফ্রেব্রুয়ারিতে গড়ে ব্যাংকগুলো ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে। আর আমানতে গড় সুদ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মার্চে ঋণের গড়সুদ ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ; আমানতে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

আর এপ্রিলে ব্যাংকগুলো গড়ে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করেছে। আর আমানতে সুদ ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

যে কারণে ব্যাংকের মুনাফা বেশি

সবশেষ হিসাব অনুযায়ী এখন আমানত আর ঋণের সুদহারের পার্থক্য ৩ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংক সুদ বাবদ ৪ টাকা ৩৬ পয়সা ব্যয় করে এই পরিমাণ আয় করেছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়।

আবার সুদহারের পরে ঋণের সার্ভিস চার্জ আদায় করে ব্যাংকগুলো।

অথচ যখন ‍ঋণের সুদহার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ ছিল, তখনও ব্যাংকের এত বেশি মুনাফা থাকত না। তখনও ব্যবস্থাপনা ব্যয় আর সার্ভিস চার্জ ছিল সমান। কিন্তু আমানতের সুদহারেই ব্যাংককে ব্যয় করতে হতো বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি।

তখন আমানতের সুদহার ছিল ১১ থেকে ১২ শতাংশ।

অর্থাৎ সে সময় ১৫ থেকে ১৬ টাকা সুদ আয়ের জন্য সুদ ব্যয় ছিল ১১ থেকে ১২ টাকা।

শতকরা হিসাবে সুদ আয় ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল ২৫ শতাংশের মতো। সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৬৯.৭২ শতাংশ।

এখন ব্যাংক ১২ টাকা সুদ ব্যয় করলে আয় হয় সাড়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা, যেটি আগে ছিল ৪ টাকার মতো।

মহামারির বছরে ব্যাংকগুলো এবার গত বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করে শেয়ারধারীদের গত বছরের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ বিতরণ করতে পেরেছে। কীভাবে তারা বেশি মুনাফা করল এই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বারবার বলছেন, ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, সে জন্য তাদের টাকা জমা রাখতে হয়নি। ফলে লভ্যাংশ বেড়েছে।

তবে একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, তারা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছেন ঠিকঠাকমতোই। কারণ এখন না রাখলে পরে একসঙ্গে বেশি রাখতে হবে। সেটি ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি করত। সেই ঝুঁকি তারা নেননি।

ব্যাংকাররা যা বলছেন

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হওয়ার পরে ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমানতকারীদের বিষয়টা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ঋণ নেবে যারা তাদের কথা চিন্তা করা হয়েছে।’

মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, কৃষি, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা বলেছেন, উৎপাদন খাতে ঋণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন খরচ যাতে কমে আসে সে লক্ষ্যে ঋণের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে শুরুতে তারা ধারণা করেছিলেন। কিন্তু আমানতের সুদ কমিয়ে আনার ফলে ব্যাংকের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

ব্যাংকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমানতের সুদ কমানো। এটা না হলে ব্যাংকগুলোর মার্জিন (সুদহারের পার্থক্য) কমে যেত। কম সুদে আমানত দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর মুনাফা খুব বেশি কমেনি।

বর্তমানে ব্যাংকগুলো মেয়াদি আমানতের ওপর ৬ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে না। চলতি আমানতে ব্যাংকগুলো সুদ দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ।

গত এপ্রিলে সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ার পরও কিছু ব্যাংক ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিয়েছিল। কিন্তু এখন ব্যাংক নিজের ইচ্ছাতেই ৭ থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘৯ শতাংশ সুদের ফলে ছোট উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ তাদেরকে কেউ এই সুদে ঋণ দিতে চাইছে না। কিন্তু বড় উদ্যোক্তাদের ৯ শতাংশে থেকে কমে ৫/৬ শতাংশেও ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলে যারা অল্প আমানত রাখে, ক্ষুদ্র ঋণ নেয়, তাদের সমস্যা হয়েছে বেশি।’

তার মতে, বড় ঋণ আর ছোট ঋণের জন্য একক সুদহার হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘যিনি ১০০ কোটি টাকা নেবেন, আর যিনি ৫০ হাজার টাকা নেবেন, দুই জনের জন্য একই সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়া ঠিক না। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু লাভবান হয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরা।’

সুদ কমার প্রভাব সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর পড়লেও এই প্রভাব সমাজের সমস্ত শ্রেণির ওপর সমানভাবে পড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘ছোট ও মাঝারি মানের ব্যাংকগুলোতে আমানত কমেছে। ফলে তাদের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমেছে। তবে লাভ হয়েছে বড় ব্যাংক আর ব্যবসায়ীদের।’

তিনি বলেন, ‘আর আমানতকারীদের মধ্যে বয়স্ক নাগরিক, যারা তাদের বিগত কর্মজীবনের সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে তার সুদে সংসার চালাচ্ছেন, সুদ কমে যাওয়ার ফলে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। একইভাবে যারা ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

অবশ্য এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকে আমানত রাখার বদলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ আছে। সেখানে ব্যাংকের সুদহারের দ্বিগুণেরও বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যায়।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মুনাফা আরও বাড়ার আশা

গত বছরের এপ্রিলে ঋণের নতুন সুদহার ঠিক হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ঋণ বিতরণ খুবই কম। গত এক বছরে নতুন ঋণ বিতরণ হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার মতো। কিন্তু এর মধ্যে বিনিয়োগ বা ভোক্তা ঋণ বিতরণ হয়নি বললেই চলে।

সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ হিসেবে বিতরণ হয়েছে। আর এর পরিমাণই এই ঋণের প্রবৃদ্ধির সমান।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উদ্যোক্তারা যখন ঋণ নেয়া শুরু করবেন, তখন তাদের সুদ বাবদ আগের চেয়ে অর্ধেক খরচ করতে হবে বলে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়বে। আর ব্যাংক যত বেশি ঋণ দিতে পারবে, তার আয় তত বাড়বে।

এ বিভাগের আরো খবর