দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, কৃষি উৎপাদন, জনসংখ্যার বিষয়ে তথ্য পেতে সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের কাছ থেকে ‘বিশুদ্ধ’ তথ্য চান পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
সরকার বিবিএসের এর ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মূল তথ্য আসে বিবিএস থেকে। এজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর আরও বিশুদ্ধতা দরকার।’
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত বিবিএস গ্লোসারি (কনসেপ্টস অ্যান্ড ডেফিনেশন) ' শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নে কাজ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগে বিবিএসের বিভিন্ন শুমারি ও জরিপ ও অন্যান্য পারিসংখ্যানিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত সংজ্ঞা ও ধারণাসমূহের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হতো।
জরিপে যদি ‘ভয়ংকর’ কিছু আসে তাহলে প্রয়োজন মনে করলে তাকে জানানোর পরামর্শও দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমি প্রয়োজনে তা সরকার প্রধানকে জানাব।’
সরকারি সংস্থাটির তথ্য নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গত অর্থবছরের মাথাপিছু আয়ের হিসাব দিলেও সংস্থাটি এখনো জিডিপি প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব দেয়নি। আবার চলতি অর্থবছর শেষ প্রান্তে এখনো জিডিপির প্রাক্কলন হয়নি।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রাক্কলনের সঙ্গে বিবিএসের হিসাবের বড় ফারাকও থাকে। প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপি গণনার কথা থাকলেও নেই কোনো উদ্যোগ।
ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপের কথা থাকলেও পাঁচ বছর ধরে দেশে শ্রমশক্তি জরিপ নেই। তাই করোনার এ সময় দেশের শ্রমবাজারের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছে না সরকার।
সংস্থাটির ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপরে আর কোনো তথ্য নেই। এমনকি প্রায় দেড় বছরের করোনাকালীন সময়েও দরিদ্র মানুষের উপর কোনো বড় জরিপ নেই।
গত সেপ্টেম্বরে মাত্র ২ হাজার ৪০ জন গ্রাহকের উপর মোবাইল জরিপ চালায় সংস্থাটি। ফলে বাজেটে নতুন দরিদ্রদের জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার।
গোপনীয়তা কেবল এক শতাংশে
সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাসী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সরকারি তথ্য প্রকাশে কোনো সমস্যা নেই। শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণে এক শতাংশ গোপনীয়তা রয়েছে। গণমাধ্যমে সেটির প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাবে বলে তিনি আশা করেন।
মন্ত্রী এও বলেন যে, আগামীতে হয়ত সেই এক শতাংশও আর গোপন রাখার প্রয়োজন নাও হতে পারে।
মন্ত্রী আমলাতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করেন। বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের বিকল্প শূন্যতা। জীবনে শূন্যতা ভয়ঙ্কর।’
মন্ত্রী নিজেও সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমিও এক সময় আমলা ছিলাম। তবে ইউএনও, ডিসিসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচিত স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। আমলারে দক্ষতা বাড়াতে হবে, বেশি বেশি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁও-এ পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল স্ট্রাটেজি ফর ডেভেলপমেন্ট অব স্টাটিসটিকস (এনএসডিএস) প্রকল্পে পরিচালক দিলদার হোসেন।
মূল প্রবন্ধে দিলদার বলেন, ‘বিবিএসের বিভিন্ন শুমারিতে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা বা সংজ্ঞা ব্যবহৃত হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তথ্যও ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ সমস্যা দূর করতে সব বিষয়ে অভিন্ন সংজ্ঞা থাকা দরকার।’
প্রকাশনাটিতে কৃষি, শিল্প, পরিবেশ, ব্যবসা, উৎপাদন, সেবা, জিডিপি, মূল্য ও মজুরি, বৈদেশিক বাণিজ্যে, ব্যাংকিং, দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, শ্রমশক্তি, জেন্ডার, রেমিট্যান্স, ডেমোগ্রামি, ফার্টিলিটি, মর্টালিটি, মাইগ্রেশনসহ বিভিন্ন বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক বিষয়ে ২ হাজার ৪১টি কনস্পেট ও ডেফিনেশন (সংজ্ঞা) স্থান পেয়েছে।
বিবিএস মহাপরিচাল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সার্বিক পরিসংখ্যান ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র বা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটিজি ফর দ্যা ডেভলপমেন্ট অব স্টাটিসটিকস অনুমোদন করা আছে। এটা বাস্তবায়নে বিবিএসের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।’