ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম রোধে এক লাখ শিশুকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন চলমান প্রকল্পের আওতায় দেয়া হবে এ প্রশিক্ষণ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার ক্রয়বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত দর প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।
এটিসহ মোট ১০টি দর প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে বিড়ি-সিগারেট, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ, ইট-পাথর ভাঙা, গ্যাস বার্নার, জাহাজভাঙা শিল্পসহ ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় প্রায় ১৩ লাখ শিশু কর্মরত।
অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ার মূল কারণ দারিদ্র্য। কেননা, অনেক শিশু শ্রমিকের আয়েই চলে তাদের পরিবার। অভাবের তাড়নায় নিরুপায় হয়ে শিশুরা এসব কাজ করছে। সস্তা শিশুশ্রমের কারণেও মালিকপক্ষ সুযোগ নিচ্ছে।
শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে রোধ করতে হলে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করতে শিশু নির্যাতন ও অপহরণ।
বাংলাদেশ শ্রম আইনে উল্লিখিত খাতগুলোতে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। সে লক্ষ্য সামনে রেখে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি মনে করেন, যেসব পরিবারের শিশুরা কাজ না করলে সংসার চলবে না, এমন পরিবারকে কিছু ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করে ওই শিশুকে কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত রাখা যেতে পারে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে এসব শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রম নিরসনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে এক লাখ শিশুকে ছয় মাস মেয়াদি উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাস মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ জন্য ব্যয় ১৬০ কোটি টাকা।’
সারা দেশে ১২২টি এনজিওর মাধ্যমে এসব শিশুকে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বাধ্যতামূলক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, মিড-ডে মিল কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ ২৮৫ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
তিন পাবর্ত্য জেলার দুর্গম এলাকায় মোবাইল সেবা সম্প্রসারণ
এদিকে তিন পার্বত্য জেলার (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) দুর্গম এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত দর প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।
‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ নামে এই প্রকল্পের আওতায় এসব এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে মোবাইল সেবা দিতে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন পাবর্ত্য জেলার ৫৯টি ইউনিয়নকে মোবাইল সেবার আওতায় আনা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।