বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমের ক্রেতা নেই, বড় ক্ষতির মুখে চাষি

  •    
  • ৮ জুন, ২০২১ ১৮:২০

পোরশা উপজেলা সদরের আমচাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ মণের মতো আম নিয়ে এসেছি। দুই ঘণ্টা ধরে ভ্যানের ওপর রোদে বসে আছি, ক্রেতার দেখা নেই। একজন নাগফজলি আমের দাম ১৩৫০ টাকা করে মণ বলে গেলেন। এ দামে আম বিক্রি করলে কোনো লাভই হবে না। অন্যদিকে বাগানে আম পেকে যাওয়ার সময় হয়েছে, দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে।’

নওগাঁর হাটবাজার, আড়ত ভরে গেছে নানা জাতের আমে। ২৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়া শুরুর পর যে হারে আম বাজারে আসছে সেই অনুপাতে ক্রেতা নেই।

করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ও বিশেষ লকডাউনের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলাসহ জেলা সদরে ঢুকছেন না। এতে আমের বেচা-কেনায় নেমেছে ধস।

আমের বাজারগুলোতে মান ও আকারভেদে প্রতিমণ গোপালভোগ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ক্ষীরশাপাতি ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা, নাগফজলির ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরে আমের ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৫ শ কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ ও লকডাউনে আমের বাজারগুলোতে এবার বাইরের পাইকাররা কম আসছেন।

প্রখর রোদে সারি সারি ভ্যানের ওপর আম নিয়ে মাথায় গামছা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন চাষিরা। একটু ভালো দামের আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। তারপরও ন্যায্য দাম ও ক্রেতা না পেয়ে অনেক চাষি আম নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। অনেক চাষি ব্যবসায়ীদের চাওয়া পানির দরে ছেড়ে দিচ্ছেন কষ্টে উৎপাদিত আম।

গত বছর জাতভেদে আমের যে দাম ছিল, এবার তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমের বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।নিয়ামতপুরের আমচাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমের দামই তেমন বলছেন না। গোপালভোগ ও ক্ষীরশাপাতি জাতের ছয় মণ আম এনেছি বিক্রি করতে। গোপালভোগ আমের দাম বলছে ১২০০ টাকা মণ আর ক্ষীরশাপাতি ১৩০০ টাকা।

‘গত বছর গোপালভোগ বিক্রি করেছি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং ক্ষীরশাপাতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে মণ। এবার আমের যে দাম আমরা লাভের মুখ দেখব না। লোকসানে পড়ে যাব।’

করমুডাঙ্গা গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম আম নিয়ে এসেছেন সাপাহার সদরের আড়তে বিক্রি করতে। তিনি জানান, ‘২০ বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছি। সকাল থেকে দুটি ভ্যানে করে নাগফজলি ও গুটি জাতের আট মণ আম নিয়ে বসে আছি, ক্রেতা তেমন নেই। কয়েকজন ক্রেতা এসে যে দামে আম কিনতে চাচ্ছেন সেটা বলার মতো নয়।

‘গুটি আমের দাম বলছেন ৫০০ টাকা মণ আর নাগফজলির দাম বলছেন ১৪০০ টাকা। আম আবাদে প্রতি বিঘায় শ্রমিক, সেচ, নিড়ানি, ভিটামিনজাতীয় ওষুধ প্রয়োগে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এত কম দামে আম বিক্রি করলে লাভ করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘বাইরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা নওগাঁয় আম কিনতে আসছেন না করোনার সংক্রমণ ও লকডাউনের কারণে। অন্য জেলায় পাইকাররা ৫৫ টাকা কেজিতে প্রতি মণ হিসেবে আম কেনেন। আর আমরা ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম বিক্রি করি। এসব কারণেই নাকি ক্রেতা সংকট ও আমের দাম কম।’

পোরশা উপজেলা সদরের আমচাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি প্রায় ১০ মণের মতো আম নিয়ে এসেছি। দুই ঘণ্টা ধরে ভ্যানের ওপর রোদে বসে আছি, ক্রেতার দেখা নেই। একজন নাগফজলি আমের দাম ১৩৫০ টাকা করে মণ বলে গেলেন। এ দামে আম বিক্রি করলে কোনো লাভই হবে না। অন্যদিকে বাগানে আম পেকে যাওয়ার সময় হয়েছে, দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যেন দ্রুত আমের বাজার মনিটরিং করে। বাইরের ব্যবসায়ীরা যেন আসতে পারেন, সে জন্য উদ্যোগ না নিলে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’

সাপাহার উপজেলা সদরের আম ব্যবসায়ী মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, ‘লকডাউন ও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নওগাঁয় কম আসছেন। যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমের অর্ডার করেন, তারাও কম অর্ডার করছেন। এ কারণে চাষিদের কাছ থেকে বেশি আম কিনতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীদের আম কেনার জন্য নওগাঁয় প্রবেশে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা পুরোদমে নওগাঁ আসতে শুরু করলে আমের বাজার দাঁড়িয়ে যাবে, বেচা-কেনা বাড়বে, চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।’

সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্ত্তিক সাহা জানান, রাজশাহী বিভাগে আমের মূল পাইকারি ব্যবসায়ীরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট ও ভোলাহাট উপজেলার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আড়তে আসা শ্রমিকদেরও করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী এখনও বাজারে আসা শুরু করেননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে এক টন হিসাবে জেলায় ৩ লাখ ৬২ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৫০০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৩ জুন থেকে ৯ জুন পর্যন্ত নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় বিশেষ লকডাউন চলছে। তবে আম বেচাকেনার জন্য চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বাস্থবিধি মেনে অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।

এ বিভাগের আরো খবর