শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের সময় দুই বছরের বদলে পাঁচ বছর করার দাবি জানিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের বড় সংগঠন বিজিএমইএ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও সংকটে ফেলেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই সহযোগিতা চেয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাতে এ সহযোগিতা চেয়েছে সংগঠনটি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান (কচি), সহসভাপতি শাহিদউল্লাহ আজিম, সহসভাপতি (অর্থ) খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক আসিফ আশরাফ, খসরু চৌধুরী এবং সাবেক পরিচালক মুনির হোসেন।
গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে পোশাক মালিকরা পেয়েছেন ২০ হাজার কোটি টাকা।
শ্রমিকদের চার মাসের বেতন পরিশোধ করতে এই টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে তিন মাসের বেতনের টাকা দেয়া হয় দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জে। বাকি টাকার সুদ নয় শতাংশ হলেও তার সাড়ে চার শতাংশ দেবে সরকার।
এই ঋণ ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ড দিয়ে দুই বছরে শোধ করার কথা ছিল। পরে গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানো হয়েছে দেড় বছর। তবে পরিশোধের সময় দুই বছরই রাখা আছে এখন পর্যন্ত।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবার নতুন করে প্রণোদনার দাবি করেছিলেন পোশাক মালিকরা। তবে সরকার এবার আর তাদের কোনো প্রাণোদনা দেয়নি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘করোনা মহামারিতে পোশাক শিল্প ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। তবুও উদ্যোক্তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পোশাক শিল্প সংক্রান্ত ইস্যুগুলো সহজীকরণের উদ্যোগ নেয়া হলে তা শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।’
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘পোশাক শিল্পকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত রয়েছে। যৌক্তিক দাবিগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা করবে। আর যেসব বিষয়ে আদেশ জারি করা সম্ভব হবে, সেসব বিষয়ে আদেশ জারির জন্য ব্যাংক উদ্যোগও নেবে।’
আরও যেসব দাবি
গভর্নরের সঙ্গে আলোচনায় বিজিএমইএ সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আরও বেশ কটি দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে ইডিএফ ফান্ডের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করা, একক ঋণ গ্রহীতার সীমা ৩০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো এবং এ সুবিধার মেয়াদ আগামী আগামী ডিসেম্বর বাড়ানো।
করোনাজনিত কারণে ঋণ শ্রেণিকরণের সময়সীমা বৃদ্ধি করা, ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের বন্ডেড ওয়্যার হাউজ লাইসেন্স এবং আইআরসি দাখিলে চাপ না দিতে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা জারি করা।
বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা বিধি শিথিলকরণ বিষয়ে জারিকৃত সার্কুলারের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করার দাবিও জানানো হয়।
এ ছাড়া প্যাকিং ক্রেডিটের বিপরীতে সুদের হার ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ করা, পোশাক শিল্পখাতে ১৩৩ রুগ্ন শিল্পের পুনর্বাসনে নীতিগত সহায়তা দেয়া।