বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘুরে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি বাণিজ্য

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ২০:৩৫

গত ১১ মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ফলে আগামীতে আরও বাড়বে রপ্তানি।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতো রপ্তানি আয়েও উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।

সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩১০ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত বছরের মে মাসের চেয়ে ১১২ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ এই মে মাসে গত বছরের একই মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে।

আর এর মধ্য দিয়ে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।

অথচ নয় মাস পর্যন্ত অর্থাৎ জুলাই-মার্চ হিসাবে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ নেতিবাচক (ঋণাত্মক) প্রবৃদ্ধি ছিল।

তবে রপ্তানিতে এই বড় উল্লম্ফনের একটি কারণ আছে। আর সেটি হলো, করোনার প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের এপ্রিলে পণ্য রপ্তানি বড় ধরনের হোঁচট খায়। রপ্তানি নেমে যায় ৫২ কোটি ডলারে। পরের মে মাসে সেই বিপর্যয় এপ্রিলের মতো অতোটা ব্যাপক ছিল না। মে মাসে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

এরপর থেকে মহামারির মধ্যেও রপ্তানি আয় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। গত কয়েক মাস ধরে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এমনকি মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেও সেটি অব্যাহত আছে।

আগামী দিনগুলোতেও এই আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

করোনার কারণে গত বছরের এপ্রিলে সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্পকারখানা তিন সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল। সে কারণে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। সংক্রমণ রোধে ওই সময় লকডাইনসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার উৎপাদন চালানোর সুযোগ দেয় সরকার। তাই এপ্রিল ও মে মাস ছাড়া রপ্তানি খুব একটা কমেনি।

যেহেতু ওই দুই মাসে রপ্তানি বেশ কমেছিল, তাই এবার এই দুই মাসে (এপ্রিল ও মে) আকাশছোঁয়া প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এপ্রিলে রপ্তানি বেড়েছিল ৫০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

তবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ৩০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তার তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফেরার কারণেই সার্বিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

সার্বিকভাবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের (৩৫.১৮ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।

তবু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না

লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে আরও ৫৮২ কোটি ডলার প্রয়োজন। বাকি এক মাস জুনে এই পরিমাণ রপ্তানি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, গত ১১ মাস গড়ে ৩২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।

তার আগের বছর (২০১৮-১৯) রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

পোশাক ও পাট খাতে সুসময়

তৈরি পোশাকের রপ্তানি আবার ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। অর্থবছরের ১১ মাসে দুই হাজার ৮৫৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে বেশ – ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ওভেন পোশাকে বেড়েছে ২ শতাংশের মতো। নিট লক্ষ্যের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি আয় করলেও ওভেন পিছিয়ে আছে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এই ১১ মাসে (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ মে) ১০৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া ১০৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বেশ কয়েক বছর পর গত এপ্রিল মাসে চামড়া রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। মে মাসেও সেটা অব্যাহত থাকে। এই ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৮৪ কোটি ৬১ ডলার আয় হয়েছে; প্রবৃদ্ধির অঙ্ক ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এ সময়ে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ১৯ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ।

রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়ানোর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্পের বিদ্যমান প্রণোদনার সঙ্গে ১ শতাংশ হারে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়েছিল।

‘এর ফলে এই খাতে করোনাভাইরাসজনিত মহামারির প্রভাব সফলভাবে মোকাবিলা করা গেছে। চলতি অর্থবছরেও এই ধারা অব্যাহত রাখার ফলে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়ায়। বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আশানুরূপ রপ্তানি অর্জন করে। এ কারণে আগামী অর্থবছরেও এই অতিরিক্ত রপ্তানি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’

সবমিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।

পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পোশাকের বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। মানুষজন আগের মতো কেনাকাটা শুরু করেছে। প্রত্যাশা করছি, আমরাও আগের অবস্থায় ফিরে যাব। রপ্তানি বাড়বে।’

এ বিভাগের আরো খবর