বিমা খাতের অবিশ্বাস্য উত্থান থামছে না। বাজেট পেশের দিন এই খাতের শেয়ারের দর আরও বেড়েছে।
সাধারণ বিমা খাতের ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টির দাম বাড়ল এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই। আরও ১৩টি কোম্পানির দাম একদিনে বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে কিছুটা নিচে নেমেছে অথবা সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি উঠে কিছুটা কমেছে। কেবল একটির দাম কমেছে শেয়ার প্রতি ৮০ পয়সা, যেটির দাম গত এক বছরে ২২ গুণেরও বেশি বেড়েছে।
গত এক বছর ধরেই বিমা খাতের শেয়ারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রবণতা চলছে। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কিছুটা দর সংশোধন হলেও ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর থেকে আবার শুরু হয় উত্থান।
পুঁজিবাজারে সব সময় জীবন বিমা খাতের তুলনায় সাধারণ বিমার শেয়ারের দাম কম থাকলেও এখন উল্টো চিত্র। জীবন বিমার চেয়ে সাধারণ বিমার শেয়ারের দাম এখন বেশি।
কেবল বিমার শেয়ারের দাম বেড়েছে এমন নয়, সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ২০টি কোম্পানির আটটিই এই এক খাতের ছিল। মোট লেনদেনের তিন ভাগের এক ভাগ এই একটি খাতের।
বিমান এই অবিশ্বাস্য উত্থানে ভর করে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ল ৩৪ পয়েন্ট।
গত রোববার ডিএসইএক্স সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছোঁয়ার পর দুই দিন নিচে নেমে আসার পর আবার দুই দিন ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে থাকল।
বিমায় ভর করে আগের দিনও সূচক বেড়েছিল ২৫ পয়েন্ট। আর আজ তা শেষ হয়েছে ছয় হাজার ১৯ পয়েন্ট। আর সপ্তাহ শেষ হলো ছয় হাজার ৫৩ পয়েন্টে।
সাধারণ বিমার এমন উত্থানের দিনে জীবন বিমাও যে পিছিয়ে ছিল এমন নয়। এই খাতের ১২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। একটির দর কেবল রয়ে যায় অপরিবর্তিত।
সে তুলনায় আবারও দরে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারে। এদিন তালিকাভুক্ত ৩১টি দর বেড়েছে চারটির। দর পাল্টায় ৬টির। বাকি ২০টি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে।
একই অবস্থা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। এদিন তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে চারটির। দর পাল্টায়নি চারটির। বাকি ১৫টির দর কমেছে।
বিমায় আগ্রহ তুঙ্গে
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধিতে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের ছিল না কোনো বিক্রেতা। যার সবগুলোর শেয়ার দর বেড়েছে ১০ শতাংশের আশেপাশে।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া বিমা কোম্পানির তালিকায় ছিল বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স-বিজিআইসি। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ারে দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৮৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ টাকা ১০ পয়সা।
ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ৮৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা।
পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ৪২ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ টাকা ৪০ পয়সা।
গ্লোবার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭৩ টাকা।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিমা খাতের দর বৃদ্ধির চিত্র
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৮৫ বেড়েছে, ইস্টাল্যান্ড ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ করে বেড়েছে।
৮০ পয়সা কমেছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর। এই কোম্পানির শেয়ার দর গত এক বছরে বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত বছর সর্বনিম্ন ২০ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানির শেয়ার দর এখন ১৯৪ টাকা ৪০ পয়সা। এটি আবার ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর।
জীবন বিমার মধ্যে সন্ধানীর শেয়ার দর ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, রূপালী লাইফের ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, প্রগতি লাইফের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
দর হারিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
টানা তিন কার্যদিবস সংশোধনের পর দিনের শুরুতে ব্যাংকের দর বাড়লেও পরে কমতে থাকে। দিন শেষে দিনের শুরু থেকে শেষের দর অনেক কমে যায়।
এই খাতে বেশি দর পতন হয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের, কমেছে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শেয়ার দর ১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের ৩ দশমিক ০৩ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ২ দশমিক ৭০ শতাংশ, এনআরবিসির ২ দশমিক ৪১ শতাংশ দাম কমেছে।
গত তিন দিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডাচবাংলার দর। ৩ শতাংশ ৮৪ শতাংশ বা তিন টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে এই ব্যাংকের শেয়ার দর।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাংক খাতে লেনদেনের চিত্র
এর বাইরে এক্সিম ব্যাংকের ১০ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ২০ পয়সা আর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের দর বেড়েছে ৩০ পয়সা।
একই পরিস্থিতি ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। চারটি কোম্পানির শেয়ার মূল্য বেড়েছে নগণ্য পরিমাণে; ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা।
অন্যদিকে যেগুলোর দর হারিয়েছে, সেগুলো পড়েছে আরও বেশি পরিমাণে।
ইউনাইটেড ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ফারইস্ট ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, মাইডাস ফিন্যান্সের ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফিনিক্স ফিন্যান্সের ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাইম ফিন্যান্সের দর কমেছে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৩ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৮ দশমিক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। লেনদেন কমেছে ১০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ১০০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা।