বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘কেপিসিএলে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ০৯:০৪

‘আমরা সরকারের সাথে একটু নেগোসিয়েশন পর্যায়ে আছি। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট-এ রকম একটা ব্যবস্থাপনায়। এটা হলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো কিছুটা বেনিফিট পাবে। তাদের যতটুকু বিদ্যুৎ সরকার কিনবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট পাবে।’

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি খুলনা পাওয়ার লিমিটেড বা কেপিসিএলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বিশেষ শর্তে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

তিনি জানান, কেন্দ্রগুলোকে নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, কিছু পকেট এরিয়ায় কয়েকটি কেন্দ্রকে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিকে অনুমোদন দেয়া হবে। তবে অন্যগুলোর বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।

এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে টাকা আটকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের মধ্যে নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বুধবার বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সরকারের সাথে একটু নেগোসিয়েশন পর্যায়ে আছি। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট-এ রকম একটা ব্যবস্থাপনায়। এটা হলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো কিছুটা বেনিফিট পাবে। তাদের যতটুকু বিদ্যুৎ সরকার কিনবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট পাবে।’

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ১৯৪ টাকায়। এটি যে মেয়াদী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা বন্ধ হয়ে যাবে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধারণা ছিল না।

কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল মোট তিনটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে জানতে পারে।

এরপর থেকে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ে লভ্যাংশ পেয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা। এই দুটির মধ্যে ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-১ এর মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মে। আর ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ মে।

গত ২০ মে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে আমাদের চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রয়েছে।’

মেয়াদ শেষে কেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই চেষ্টা তদবিরের কতটা আগাল, সে বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

অগ্রগতি জানতে কোম্পানি সচিব আরিফুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে কথা হয় কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সোহরাব আলীর সঙ্গে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হবে না।’

যদি বন্ধ হয় তাহলে বিনিয়োগকারীদের কী হবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো বোর্ডের বিষয়। তারা সিদ্ধান্ত নেবে কী হবে না হবে।’

বিএসইসির চেষ্টা

গত ২৩ মার্চ বিএসইসি কার্যালয়ে ডাকা হয় কেপিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তারা বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানকে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে দুটি কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে কেপিসিএল যে আবেদন করেছে, সেদিক বিবেচনার জন্য অনুরোধ করে সংস্থাটি।

চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজার থেকে বিভিন্ন সময় মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

এ পরিস্থিতিতে খুলনা পাওয়ার কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ লভ্যাংশ থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফেরত আসেনি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কমিশন উদ্বিগ্ন। তাই কেপিসিএলসহ অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির পিপিএ চুক্তি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নবায়নের সুযোগ রয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে কমিশন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান সম্প্রতি নিউজবাংলাকে জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও। তার বক্তব্য শুনে তিনি মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আর তিনিই বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ‘নো পে নো ইলেকট্রিসিটির’ ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছেন।

কী বলছেন বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রী

২০০৯ সালে দেশে অসহনীয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে সরকার বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অনুমতি দেয়। তখন বিদ্যুতের প্রয়োজন হলে সেগুলো থেকে কেনা হতো। আর বিদ্যুৎ কেনা না হলেও বসিয়ে রেখে ভাড়া দেয়া হতো। একে বলে ক্যাপাসিটি চার্জ।

কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে পাঁচ, ১০ ও ১৫ বছর মেয়াদী।

বিদ্যুৎ সংকটের সুরাহা হয়েছে। পাশাপাশি ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মেয়াদও ফুরিয়ে আসছে প্রায়। এই অবস্থায় সরকার আর মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের কিছু পকেট থাকায় নো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বেসিসে তাদের সুযোগ দেয়া হতে পারে। এমনও হতে পারে, যদি সারা বছর বিদ্যুৎ না লাগে, তাহলে সেক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো পড়ে থাকবে।’

খুলনার কেপিসিএল যে কারণে সুযোগ পেতে পারে

কেপিসিএলের দুটি কেন্দ্রই অবস্থিত খুলনায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কেপিসিএল তার পরেও এই সুবিধা পেতে পারে একটি বিশেষ কারণে। এই অঞ্চলে যে দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, সেগুলো এখনও চালু করা যায়নি।

বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামী আগস্টে আর দ্বিতীয় ইউনিট আরও ছয় মাস পর আসার কথা। তবে সেটি চালু করা যাবে কি না এ নিয়ে সংশয় আছে।

খুলনার রূপসায় ৮০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খুলনার খালিশপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিউজপ্রিন্ট কারখানার জমিতে এটি স্থাপন হবে।

২০১৮ সালের জুনে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের সময় ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়।

তবে এখন পর্যন্ত এর কাজ শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে।

এ প্রকল্পে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার হবে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে থাকছে ডিজেল (এইচএসডি)।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘রামপাল বা রূপসা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না হওয়া পর্যন্ত খুলনা এলাকায় কিছু বিদ্যুৎ সংকট আছে। এই অবস্থায় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র (কেপিসিএলের) থেকে প্রয়োজন হলে সরকার বিদ্যুৎ কিনবে।

যদি না হয়?

এর পরেও যদি কেপিসিএল অনুমতি না পায়, তখন কোম্পানির সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হবে।

পটুয়াখালী জেলার খলিসাখালী এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ কিনবে আগামী ১৫ বছর। এটি উৎপাদন শুরু করেছে গত ১৮ জানুয়ারি।

ইউনাইটেড পায়রার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফাইল ছবি

কেপিসিএলের বন্ধ হয়ে যাওয়া দুটি কেন্দ্রের সক্ষমতা ছিল ১৫০ মেগাওয়াট। আর এই একটি কেন্দ্রের সক্ষমতা সমান হলেও এর এক তৃতীয়াংশের কিছু বেশির মালিকানা থাকায় বিনিয়োগকারীরা সুবিধা পাবে মূলত ৫২.৫ মেগাওয়াটের।

শেয়ার নিয়ে হতাশা

২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ১৯৪ টাকা করে। ছয় বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার।

চলতি বছরের জানুয়ারি ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার শেয়ার বিক্রি করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীরা। যার পুরোটা কিনেছে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।

ফলে এই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ফলে বর্তমানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। েএই শেয়ারধারীরা এখন চরম উৎকণ্ঠায়

বিনিয়োগের কত টাকা উঠে এল?

কোম্পানিটি ২০১০ সালের। তালিকাভুক্তির বছরে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।

এরপর ২০১০ সালের জন্য ২০ শতাংশ, ২০১১ সালের জন্য ২৫ শতাংশ, ২০১২ সালের জন্য ১২.৫ শতাংশ, ২০১৩ সালের জন্য ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জন্য আবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়।

১৯৪ টাকা ভিত্তি ধরে ১০ বছরের বোনাস শেয়ার হিসাব করলে দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৫৫ পয়সা।

পাঁচ বছর ধরে নগদ লভ্যাংশের দিকে জোর দেন কোম্পানির উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ (শেয়ারপ্রতি সাড়ে সাত টাকা), ২০১৭ সালে ৫৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ এবং ২০২০ সাল ৩৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কেপিসিএল।

এ বিভাগের আরো খবর