সোয়া তিন বছর পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করার পর সূচকের উঠানামা চলছেই।
গত রোববার সোয়া তিন বছর পর সূচক প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছোঁয়ার পর দিনই ব্যাংক খাতে দর সংশোধনে যায়। পরের দিনই সূচক কমে পাঁচ হাজার নয়শ পয়েন্টের ঘরে নেমে আসে।
সেদিন ১৮ পয়েন্ট কমে সূচক দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে।
মঙ্গলবার বেশিরভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর সূচক আবার ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরে উঠে। তবে শেষ বেলায় ব্যাংক খাত ঢালাও দর হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে আবার তা ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। দিন শেষে তিন পয়েন্ট বাড়লেও তা ছয় হাজারের কমই ছিল।
বুধবার বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত সূচক ছিল উঠানামার মধ্যে। একবার ছয় হাজারের ওপরে উঠে তো পরে আবার নেমে যায়। এক পর্যায়ে আগের দিনের চেয়ে ২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে।
তখনও ব্যাংক খাতে ছিল নেতিবাচক প্রবণতা। প্রায় সব ব্যাংকই সে সময় হারায় দর। এই অবস্থা পাল্টে যায় বেলা দেড়টার পর থেকে। এক পর্যায়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ে। আর সূচকও ছয় হাজারের ওপরে গিয়ে দিন শেষ হয়।
শেষ পর্যন্ত সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ছয় হাজার ১৯ পয়েন্টে। লেনদেনও দুই কার্যদিবস শেষে দুই হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে।
দিন শেষে লেনদেন দাঁড়ায় দুই হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
এদিন সকাল থেকেই বিমা খাত যেন উড়ছিল। সর্বাধিক দর বৃদ্ধির শেয়ারে এই খাতের অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে দিনের শেষে বেশ কিছু বিমা কোম্পানির দর পতন ঘটে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে বিমাখাত
বুধবার বিমা খাতের লেনদেন হওয়া ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৫টির। আর দর কমেছে ১৫টির।
লেনদেনে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিন কোম্পানির লভ্যাংশ সংক্রান্ত কারণে শেয়ার দরের কোনো সীমা ছিল না। ফলে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের বাইরে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে।
কোম্পানিটি তার শেয়ারধারীদের ২০২০ সালের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে কোম্পানিটি তার প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ২ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ২ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা।
বিমা খাতে লেনদেনের চিত্র
কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা।
রূপালী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।
রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ। প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ৬০ পয়সা।
সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
দর সংশোধন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াল ব্যাংক
সপ্তাহের শুরু থেকে দর পতনে থাকা ব্যাংক খাতের শেয়ারে বুধবার আগ্রহ দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের। এদিন লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দর বেড়েছে।
তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯টির। কমেছে ৭টির। আর দর পাল্টায়নি ৫টির।
গত বৃহস্পতিবার সাতটি ব্যাংকের দর দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধি, আরও চারটির দর দিনের প্রান্তসীমা ছুঁয়ে ফেলা, আরও বেশ কিছুর দর সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধির আশেপাশে থাকার ঘটনায় এই খাত নিয়ে দীর্ঘ হতাশা দূর হওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এরপর রোববার সকালেও ব্যাংকের শেয়ারে উত্থান দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু পরে দাম ধরে রাখাতে পারেনি।
পরের দুই কার্যদিবসে দাম কমেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার দাম কমেছে ঢালাও।
আজ দিনের শুরুতেও প্রায় সবগুলো ব্যাংকের শেয়ার দর হারালেও দিনের শেষ ভাগে উত্থানের কারণে এই খাতে দর সংশোধন শেষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার ব্যাংক খাতের লেনদেনের চিত্র
গত দুই দিনের ধারাবাহিকতায় সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের। তবে আগের দুই দিনের মতো এদিন দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশে পৌঁছেনি।
এদিন বেড়ছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। শেয়ার দর ৭৯ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ইউনাইটেড কর্মাসিয়াল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শেয়ার দর ১৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা ৩০ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা।
প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর ১৩ টাকা থেকে ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ শেয়ার দর হয়েছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। লেনদেনে শেয়ার দর ১৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা।
যমুনা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। লেনদেনে শেয়ার দর ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ দর বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ১০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর ১৫ টাকা থেকে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার দর ১৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। বুধবার ব্যাংকটির শেয়ার দর ২৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ টাকা ৬০ পয়সা।
উত্থান দেখাল বস্ত্র খাত
ঈদের ছুটির আগে দুদিন আর ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে দুদিন উত্থান দেখিয়ে গতি হারায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানির শেয়ার দর।
বুধবার সে ধারা থেকে সরে এসে আবারও নতুন করে উত্থান দেখালো এ খাতের শেয়ার। লেনদেনে ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টির। দর কমেছে ১৩টির। আর দর পাল্টায়নি ৪টির।
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে বস্ত্র খাতের ছিল তিনটির। এরমধ্যে প্যাসিফিক ডেনিমের শেয়ার দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। শেয়ার দর ২১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ১০ পয়সা।
শাশা ডেনিমের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। লেনদেনে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা ৭০ পয়সা।
ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা ৭০ পয়সা।
বুধবার বস্ত্রখাতে লেনদেনের চিত্র
দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির বাইরেও বেশিভাগ কোম্পানি ছিল বস্ত্র খাতের। এরমধ্যে তোসরিফা ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
কাট্টালি টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। সায়হাম টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ডাক্কা ডাইংয়ের শেয়ার দর ১৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ৮০ পয়সা।
সূচক ও লেনদেন
বুধবার লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৯ পয়েন্টে।
শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইসপিআই ৬৬ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৬১ কোটি টাকা।