পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতন হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দোষারোপের কী আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘কমিশন কখনও নির্ধারণ করতে পারে না কোন শেয়ারের দর বাড়বে, কোনটির দর কমবে। তাই ভুলে শেয়ার কেনার দায় কমিশনের না।’
সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) এর নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
পুঁজিবাজারে শেয়ার দরের উঠানামা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বাজারে চাঙ্গাভাব যেমন থাকে, তেমনি মন্দাভাবও থাকে।
কখনও কোনো একটি শেয়ারের বা দল বেধে কোনো খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রবণতাও দেখা যায়, আবার একঙ্গে দর কমার প্রবণতাও দেখা যায়।
প্রায়ই দেখা যায়, তখন শেয়ার দর কমতে থাকে, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তীব্র সমালোচনা করেন বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। এটি জেনেই এখানে সবাই বিনিয়োগ করে। কিন্ত আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগকারীরা না জেনে, না বুঝে শেয়ার কেনেন। পরবর্তীতে তারা বুঝতে পারেন সেটি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এজন্য তারা কমিশনকে দায়ী করেন।’
কমিশনের দায় কতটা-সেটাও তুলে ধরে শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘পুঁজিবাজারে মনিটরিংয়ে শতভাগ সঠিক হবে এটা বলা যাবে না। এখানে কিছু ভুল হতে পারে, এর দায়িত্ব আমাদের। কিন্ত কারো ব্যাক্তিগত পোর্টফোলিও ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমাদের না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই একজন বিনিয়োগকারী তার সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে বিনিয়োগ করুক। বিনিয়োগকারীরা যাতে পুঁজিবাজার নিয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে পারে এজন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু আছে।‘
২০২০ সালে এক সংকটকালীন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয় বিএসইসির নতুন কমিশন। বেশ কিছু সংস্কার, বিনিয়োগবান্ধব সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার নিয়ে দীর্ঘ হতাশা দূর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সোয়া তিন বছর পর পুঁজিবাজারের সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট ছুঁয়েছে। লেনদেনও দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ১০ বছর ঘুমিয়ে থাকা ব্যাংক খাতও চাঙ্গা হয়েছে সম্প্রতি। আর বিমা খাতে উত্থান তো বিস্ময়কর হয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের হতাশাও দূর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেছেন, লেনদেন আরও বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকেও সঠিক পথে আনার চেষ্টা করছেন।
গত এক বছরের উত্থানে পুঁজিবাজারে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়া হয়েছেআজ তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে পুঁজিবাজারে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। তবে মূল্য লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি। আমাদের ভবিষ্ৎ পরিকল্পনা তৈরি করা আছে, আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।
যারা শেয়ার ডিলার হবেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণ নেয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শিবলী রুবাইয়াত। বলেন, ‘যে কাউকে এনে শেয়ার লেনদেন করার জন্য ডিলার হিসেবে চাকরী দেয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিলেই হবে না। ডিলার হিসেবে তার কী কাজ, কীভাবে করতে হবে সে বিষয়গুলোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্যে তাকে চাকরি দেয়া হয়েছে তা কোনো কাজে আসবে না। বরং তার ভুলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো পুঁজিবাজার।‘
বিএএসএম এর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই একাডেমির অফিসটির জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং চলছে। ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেইসব ডিলাররা এ একাডেমি থেকে সুফল পাবে।’
বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ, ড. মিজানুর রহমান ও আব্দুল হালিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।